২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৩৯:২৬ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে বছর জুড়ে আলোচিত যেসব ঘটনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৩
রাজশাহীতে বছর জুড়ে আলোচিত যেসব ঘটনা

 বছর যায় বছর আসে, আর নানান ঘটনার জন্মনেয় সময়ের সাথে। ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তৈরী হয় নানান আলোচনা ও সমালোচনা। তেমনি ২০২২ সালে রাজশাহীতে নানা আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে।
এসব ঘটনার মধ্যে সাধারণ ঘটনার সাথে সাথে রাজনৈতিক ঘটনাও ছিলো বেশ আলোচিত।

পানি না পেয়ে কৃষকের মৃত্যু

বিদায়ী বছরে জেলায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি চলতি বছরের ২৩ মার্চ গোদাগাড়ী উপজেলায় ধান ক্ষেতে পানি না পেয়ে দুই আদিবাসী কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি বিষপান করে আত্মহত্যার ঘটনা। এনিয়ে দেশ ব্যাপি বেশ আলোচিত হয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় ঘটনার তদন্ত করে।এছড়াও কৃষককে পানি না দেওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ায় ডিপ-অপারেটর সাখাওয়াতের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে রাজশাহীবাসী।

ছাত্রলীগ নেতাদের কান্ড
এছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের অডিও ফাঁস ও অপকর্মে তোলপাড় সৃষ্টি, সবশেষ কমিটি বাতিলের বিষয়টিও ছিল শিক্ষা নগরী খ্যাত রাজশাহীর আলোচনায়।

গত ২৬ জুলাই এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে। অমির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এ নির্যাতন করা হয়। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নিজ দলের কর্মীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে আবারও আলোচনায় আসেন ছাত্রলীগ নেতা অমি।

এর দিন দশেক পরেই আলোচনায় আসেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা। তার একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। ভাইরাল চার মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই অডিওতে এক নারী ছাত্রলীগ নেত্রীকে রানার বিছানায় আসার প্রস্তাব দিতে শোনা যায়। এছাড়াও আরেক নারীকে পাঠাতে বলেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।

একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এডহক শাখায় চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে রানার বিরুদ্ধে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করে সংগঠনটি।

এরপর ১৯ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও আদর্শের সঙ্গে চরম মাত্রায় সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়। সংগটনের ভাবমূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের জোর সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

সেই দিন রাতেই নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল ইসলাম রানাকে বহিষ্কার ও জাকির হোসেন অমিকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। এমনকি তদন্তাধীন অবস্থায় জেলা ছাত্রলীগ অনুমোদিত বাগমারা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তাদের পদ হারানোর সংবাদ প্রকাশ হলে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফেসবুক পোস্টে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদও জানান তারা।

সরকার দলীয় এমপির কান্ড

এছাড়াও কলেজ অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। গত ৭ জুলাই এমপি ফারুক চৌধুরী গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে এমপির ব্যক্তিগত কার্যালয় থিম ওমর প্লাজায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এই নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে দেশ ব্যাপি আলোচিত হয় ঘটনাটি। পরে এমপির পাশে বসে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সংবাদ সম্মেলন করদে দেখা যায়। সেখানে নিজেদের মধ্য ভুল বোঝাবুঝি দাবি করেন কলেজ অধ্যক্ষ। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি মারধরের সত্যতা পেয়ে বেশ কিছু সুপারিশও করেছিলো।

 

শিক্ষার্থী মৃত্যুতে উত্তেজনা

গত ১লা ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে শহরজুড়ে ছিলো উত্তেজনা। ট্রাক চাপায় রাবির গ্রাফিক্স ডিজাইন , কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদ হাবিব হিমেল মারা গেলে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। ওর রাতে ক্যাম্পাসে ৫টি ট্রাক পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়াও রাবির শহীদ হাবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার। গত ১৯ অক্টোবার রামেক হাসাপাতলে ভর্তি করালে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষনা করে। চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ভাংচুর করে। এসময় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়ে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। এনিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কয়েকদফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে। রাবি শিক্ষার্থীরাও পাল্টা কর্মসূচি পালন করে।

 

জিলাপি নিয়ে কান্ড
বছরের মধ্য ভাগে রমজানে রাজশাহীল কাঁচা আমের জিলাপী তৈরির বিষয়টিও সাড়া ফেলে দেশজুড়ে। বিশেষ ধরনের জিলাপি এনে ভোজন রসিক তো বটেই সবার কাছেই আলোচনার খোড়াক জোগায় রাজশাহীর ‘রসগোল্লা’। মিষ্টিজাত পণ্যে নতুনত্ব এনে তাক লাগিয়ে দেয় রাজশাহীসহ সারাদেশের মানুষকে। অজানা স্বাদ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রাজশাহীবাসী।

তবে কাঁচা আমের জিলাপি প্রচারে প্রতারণার অভিযোগের প্রমাণ পায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কাঁচা আমের স্বাদের ফ্লেভার মিশিয়ে সেটিকে কাঁচা আমের জিলাপি হিসেবে প্রচার করায় জরিমানাও করেন প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

সাংবাদিক নির্যাতন

গত ২৬ মে রাজশাহী মহানগরীর ভূবন মোহন পার্কে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করে। সেই ছবি তুলতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্চিত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এছাড়াও গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএমডিএর কার্যালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরা পারর্সন রুবেল ইসলাম। এই ঘটনার বিচারের দাবিতে নানান কর্মসূচি পালন করে সাংবাদিকরা। গত ১৮ নভেম্বর বিতর্কিত ‘হেটেল এক্স’ ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হন ইত্তেফাকের রাজশাহী প্রতিনিধি আনিসুজ্জামান। এই নিয়েও প্রতিবাদে সরব ছিলো সাংবাদিকরা।

 

বিএনপি-জামায়াতের কান্ড

গেল ২ নভেম্বর বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির তৎপরতায় উত্তপ্ত হয় রাজশাহীর স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন।বছরের শেষ ভাগে এসে বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে প্রাণ পায় বিএনপির বিভাগীয় ও জেলা কমিটি। দাবির প্রেক্ষিতে নগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে তিন ঘণ্টার সমাবেশের অনুমতি দেয় স্থানীয প্রশাসন। তবে বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে শুরু হয় পরিবহণ ধর্মঘট, বন্ধ হয়ে যায় পুরো বিভাগের বাস চলাচল।

বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা রাজশাহী নগরীতে এসে খোলা মাঠেই রাত্রি যাপন করতে শুরু করে। অপরদিকে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তৎপর হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সবমিলিয়ে রাজশাহীতে সরগরম হতে থাকে বছরের শেষ ভাগের রাজনীতির মাঠ।

সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ঝটিকা মিছিল করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। মিছিল থেকে ছোড়া ইটে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হায়দার ও আহাদ আলী আহত হন। তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করে। এ নিয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরের দিনে অভিযান চালিয়ে পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

শেয়ার করুন