সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন চরমে পৌঁছেছে। যে কারণে সোমবার যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে যোগ দেয়নি জোটের অন্যতম শরিক গণঅধিকার পরিষদ। দলটির দাবি, নতুন হিসাবে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য নেতারা গণঅধিকার পরিষদকে তেমন মূল্যায়ন করছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েই কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি। তবে তারা জোটে এখনো আছে।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ যুগান্তরকে বলেন, গত ১১ জানুয়ারি দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর দেশে এসে সরাসরি জাতীয় প্রেস ক্লাবে যুগপৎ আন্দোলনের গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে যোগদান করার কথা ছিল। এ কারণে তিনি বিমানবন্দরেও মিডিয়ায় কথা বলেননি। ওইদিন সদস্য সচিবের সমাবেশে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য নেতাদের জানালেও তারা সমাবেশ দ্রুত শেষ করে দেন। এ কারণে নুরুল হক নূর সমাবেশে যোগদান করতে পারেননি। এসব কারণে গণতন্ত্র মঞ্চের এক ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়। ফলে দলীয় বৈঠকে সোমবারের (গতকাল) সমাবেশে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যান্য দলের চেয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামো অনেক ভালো। সমাবেশে দলের লোকসমাগমও অনেক বেশি হয়।
অবশ্য গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ওদিন (১১ জানুয়ারি গণ-অবস্থানে) গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান ছিলেন। নূরের আসার কোনো কথা ছিল না। শেষ মুহূর্তে বলা হয়েছে নূর আসবে। কিন্তু তখন সে রকম পরিস্থিত ছিল না। বারবার প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছিল তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য। আসলে একসঙ্গে পথ চলতে গেলে পরিচালনায় ক্রটি কিছু হতেই পারে। কিন্তু আমরা যে লক্ষ্যে আছি, তাতে কারও দ্বিমত নেই। অভ্যন্তরীণ ছোটখাটো বিষয়ে যদি কারও ক্ষোভ তৈরি হয় তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের ঐক্য সুদৃঢ়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব কারণে যুগপৎ আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না। গণতন্ত্র মঞ্চ সাতটি দলের সমন্বিত সিদ্ধান্তে চলে।
মঞ্চের একাধিক শরিক দলের শীর্ষ নেতা জানান, জোটের বৈঠকে সব সময়ই সাত দলের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। সর্বশেষ রোববারের বৈঠকেও গণঅধিকার পরিষদের প্রতিনিধি হিসাবে যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ছিলেন। গণতন্ত্র মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূর খুব কম বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন। বরং মঞ্চের কর্মসূচির পাশাপাশি তারা নিজ দল থেকে নানা ইস্যুতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। যা নিয়ে আগে থেকেই অস্বস্তিতে মঞ্চের অন্য শরিক দল।
গণতন্ত্র মঞ্চের একটি সূত্রের দাবি, নূরের দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন করার পর থেকে তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এই পরিবর্তনের মূল কারণ কী এখনো পরিষ্কার নয়। আসলে তারা নিবন্ধন পাওয়ার আশায় তাদের দল পরিচালনায় কোনো ‘কৌশল’ নিয়েছেন কিনা তা সময় এলেই স্পষ্ট হবে।
এদিকে বিএনপি ও সমমনাদের যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর থেকে গণমিছিল, গণ-অবস্থান ও সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ তিন কর্মসূচিতেই মঞ্চের সিনিয়র দুই নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব অংশ নেননি। এ নিয়েও রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন চলছে। তবে এ বিষয়ে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অংশ নিতে পারেননি। শিগগিরই তিনি কর্মসূচিতে থাকবেন। আর আসম আব্দুর রবের বয়স হওয়ার কারণে মুভমেন্ট খুব সীমিত। শারীরিক নানা সমস্যার কারণে তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শে চলতে হয়। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ : যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশ থেকে আগামী ২৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, ২৫ জানুয়ারি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, সরকারের পদত্যাগ এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তৈরি, দ্রব্যমূল্য ও মানুষকে বাঁচানোর লক্ষ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করবে। এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ধারা আরও শক্তিশালী হবে।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির একেএম জামির প্রমুখ।