মিসর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ’ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বলাকায় অভিযান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম।
বুধবার বেলা ১১টায় দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম হযরত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলাকা অফিসে পৌঁছায়। মূলত তারা অনিয়ম সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করতেই অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
দুদকের দুই সদস্যর একটি টিম অভিযান পরিচালনা করছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।
মিসরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্ত চায় বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির রিপোর্টের পর দুদকের টিম সেখানে গিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিসর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে এটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। কিন্তু ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। সংসদীয় কমিটির মতে, এতসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১১শ কোটি টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। কমিটি এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সুপারিশ করেছে। কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এর আগে দশম জাতীয় সংসদেও বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দুটি মিসরীয় বিমান লিজ নেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। সে সময় লিজের অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল। চলতি একাদশ সংসদের কমিটি নতুন করে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তারা বেশ কিছু অনিয়ম পেয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করে। পাশাপাশি কমিটি জড়িতদের ডেকে ব্যাখ্যাও নেয়।
জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরপরই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র তলব করে দুদক। দুদক উপপরিচালক সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বরাবর পাঠানো চিঠিতে অনুসন্ধান টিম লিজ নেওয়ার দরপত্রসহ অন্তত ১৩ ধরনের নথিপত্র অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।