প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রোববার রাজশাহী সফরে আসছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তার আগমন উপলক্ষ্যে রাজশাহী শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। তাকে সাদরে বরণ করতে প্রস্তুত রাজশাহী। এ সফরে তিনি ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। দুপুর ২টার দিকে শহরের ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় তিনি ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে এক মাস ধরে চলা নানা প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তাকে স্বাগত জানাতে নগর ও জেলাজুড়ে ৪৪টি তোরণ তৈরি করা হয়েছে। জনসভাস্থলের আশেপাশের সড়কগুলোকে সংস্কার করে চকচকে করা হয়েছে। নগরীর সড়কদ্বীপগুলো ঝেড়ে-মুছে রঙিন করা হয়েছে। নগরজুড়ে প্রজাপতি ও রাজকীয় সব সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। এসব ব্যানারে সরকারের উন্নয়ন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে রাজশাহী নগরী নতুন সাজে সেজেছে। নগরবাসী বলছেন, এর আগেও অনেকবার রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছেন। কিন্তু এবারের চোখ ধাঁধাঁনো আয়োজন আগে কোনদিন দেখেননি তারা। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চলছে। শুধু রাজশাহী নয়-আশেপাশের জেলাগুলোতেও বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সর্বত্রই বাহারী পোস্টার ফেস্টুন ব্যানারে ছেয়ে গেছে নগরীসহ গোটা জেলা।
জানা গেছে, বিভিন্ন সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে রাজশাহীতে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কয়েকদিন আগে থেকেই রাজশাহীতে অবস্থান নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি তদারকির জন্য অনেকে এক সপ্তাহ আগে রাজশাহীতে এসেছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনসভাস্থল ছাড়াও নগরীর চারটি প্রবেশদ্বারসহ প্রতিটি কোণে ছয় সহস্রাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু জনসভাস্থলের নিরাপত্তায় তিন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য থাকছে।
নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে রোববার নগরীর কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশেষ করে নগরীর সিটি বাইপাস সড়ক ছাড়াও কোর্ট থেকে সাহেব বাজার পর্যন্ত সড়কটিতে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নগরীর বাইরে থেকে আগত নেতাকর্মীরা যাতে সহজে জনসভাস্থলে পৌঁছাতে পারেন ও জনসভা শেষে নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে পারেন সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ জনসভাকে বিভিন্ন কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়সহ স্থানীয় নেতারা। আওয়াম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, একটা সময় ছিল রাজশাহীকে বিএনপির ঘাঁটি বলা হতো। এখন রাজশাহী হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। গত কয়েক বছরে রাজশাহী নগরীসহ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এলাকার জনগণ এখন বুঝতে পারছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের ও এলাকার উন্নয়ন হয়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীতে আগমন উপলক্ষ্যে এ অঞ্চলজুড়ে সাজ সাজ রব চলছে। মানুষের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
প্রশাসনিক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে হেলিকপ্টারযোগে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রী অবতরণ করবেন। ৩৮ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবীস সহকারী পুলিশ সুপারদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন তিনি গ্রহণ করবেন। সেখানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন তিনি। এরপর সারদা থেকে সড়কপথে রাজশাহীতে পৌঁছে সার্কিট হাউসে প্রশাসনের বিভাগীয় ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করবেন।
রাজশাহীতে দিনব্যাপী সফরে প্রায় এক হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ২৫ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া আনুমানিক ৩৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। দুপুর ২টার দিকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসাবে তিনি ভাষণ দেবেন। রোববার দিনের শেষে তিনি একই পথে ঢাকায় ফিরবেন।