২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৩৬:৪৭ অপরাহ্ন
১১৬১ কোটি টাকার দুর্নীতি : বিমানের ২৩ কর্মকর্তার দুদকের মামলা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৩
১১৬১ কোটি টাকার দুর্নীতি : বিমানের ২৩ কর্মকর্তার দুদকের মামলা

মিশরের ইজিপ্ট এয়ারের বোয়িং ৭৭৭ থেকে ২০০ ইআর মডেলের দুটি উড়োজাহাজ লিজ গ্রহণে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দুদক সচিব বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে ইজিপ্ট এয়ার লিজ গ্রহণে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। এ ঘটনা অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে সুপারিশ পাঠায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। দুদক ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দুদকের অনুসন্ধানে দুটি উড়োজাহাজ লিজ গ্রহণে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করা হয়। 

মামলার এজাহারে বলা হয়—আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয়। এ উড়োজাহাজ মেরামত ও পরিচালনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকার ক্ষতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ১০৯/৪০৯/৪২০ ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। 

মামলার আসামিরা হলেন বিমানের ফ্লাইট অপারেশন্সের পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুর রহমান ফারুকী, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরী, এয়ারওরথিনেস কনসালট্যান্ট (সিএএবি) গোলাম সারওয়ার, প্রকৌশলী মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঞা, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস, ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, জিয়া আহমেদ, চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজাদ রহমান, ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, ইঞ্জিনিয়ার অফিসার মো. জাহিদ হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক, ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝরনা ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার গাজী মাহমুদ ইকবাল।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট (মিশর) এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭ থেকে ২০০ ইআর নামের দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। ইঞ্জিনগুলো প্রায় ১২ থেকে ১৫ বছরের পুরোনো ছিল। উড্ডয়ন যোগ্যতার মেয়াদকাল কম থাকায় লিজ আনার পর এক বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে উড়োজাহাজ সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরেকটি ইঞ্জিন ভাড়ায় নেওয়া হয়। এটিও দেড় বছর পর নষ্ট হয়ে যায়। তখন ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়; কিন্তু কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমানে ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এ ছাড়া ইজিপ্ট এয়ার মেরামতকারী কোম্পানিকে অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। উড়োজাহাজ দুটি ৫ বছরের জন্য লিজ আনা হলেও মাত্র ১১ মাস পরিচালনা করা হয়েছে। অথচ ইজিপ্ট এয়ারের ভাড়া ও মেরামতকারী কোম্পানির পেছনে ৫ বছরে বিমানের ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ক্ষতি ও আত্মসাৎ হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইজিপ্ট এয়ারের উড়োজাহাজ লিজ গ্রহণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে ঢাকার বাইরে বদলির পর টিমের প্রধান করা হয় উপপরিচালক আনোয়ারুল হককে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট-সংক্রান্ত নথি তলব করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর চিঠি দেয় দুদক।  অনুসন্ধানকালে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। মামলার তদন্ত পর্যায়ে প্রয়োজন হলে আসামিদের গ্রেপ্তারও করা হবে।

শেয়ার করুন