২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:১৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
নামাজের অপরূপ সৌন্দর্য
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৩
নামাজের অপরূপ সৌন্দর্য

ইসলামের প্রতিটি বিধান ও আমলের মাঝেই যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে। ইসলামে এমন কোনো আমল নেই যা মুসলমানের জন্য পালন করা কষ্টকর। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ ও রোজা, ধনী-দরিদ্র সবার জন্যই ফরজ। তবে হজ এবং জাকাতের বিধান শুধু ধনী ব্যক্তিদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।

শারীরিক অসুস্থতাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরজ রোজা ভঙ্গ করার হুকুম রয়েছে এবং পরে তা আদায় করে নেওয়া যায়। রোজা ভঙ্গের পর কাফ্ফারা আদায় করতে পারবেন এ বিধানও ইসলামে রয়েছে।

তবে নামাজের ক্ষেত্রে কাজা করার হুকুম শুধু বিশেষ ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়েছে এবং নামাজের কোনো কাফ্ফারা বা বদলা হয় না। যদি কোনো ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে না পারেন; তিনি যেন বসে নামাজ আদায় করে নেন। যদি কারও বসে নামাজ আদায় করতে কষ্ট হয়ে পড়ে তারপরও তিনি যেন শুয়ে নামাজ আদায় করে নেন। এমনকি চোখের ইশারায় নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে।

দেহে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো অবস্থায়ই কোনো ব্যক্তির জন্য নামাজ বাদ দেওয়ার বিধান নেই। ইসলাম সুস্থ ব্যক্তির জন্য যেমন নামাজের নিয়ম ঠিক করে দিয়েছে ঠিক তেমনিভাবে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের ব্যাপারেও কিছু নিয়ম-নীতি ঠিক করে দিয়েছে। ইসলামে নামাজ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যা পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য ফরজ।

প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য ইমান গ্রহণের পর প্রথম এবং প্রধান ইবাদত নামাজ। নামাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী যথাসময়ে নামাজ আদায় করাও জরুরি। কেননা, পরকালে সব মুসলমানের কাছে প্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তির নামাজের হিসাব দিতে সহজ হবে, তার পরবর্তী সব হিসাব সহজ হয়ে যাবে। নামাজ আদায়ের সময় অবশ্যই গুরুত্বসহকারে আদায় করতে হবে। নামাজ আদায়ে দায়সারা ভাব দেখানো মোটেই উচিত নয়।

নামাজের সব বিধান মেনে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালার প্রতি ধ্যান রেখে পরিপূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সেসব মুমিনরা সফলকাম, যারা তাদের নামাজে বিনয়াবনত থাকে।’ -(সূরা মুমিনুন, আয়াত : ১-২)।

সঠিকভাবে নামাজ আদায় ও মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ।’-(ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হাদিস : ৫২২৬)। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে দেখছেন।

নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। প্রতিদিন সিজদা দিয়ে বান্দা এটিই প্রমাণ করে যে, সে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও আনুগত্য করে না। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই মহান রবের কাছাকাছি আসা যায়। নামাজের মাধ্যমেই বান্দা তার প্রভুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়

। ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে, সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে বান্দা নামাজের মাধ্যমে সাক্ষাৎ করতে পারে এবং নিজের জন্য সাহায্য কামনা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে সূরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর।’

নামাজের মধ্যে অন্যতম একটি সৌন্দর্য হচ্ছে, নামাজের সময় সবাই সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। এক কাতারে যেমন, গরিব ব্যক্তি দাঁড়ায়; যার পরনে জীর্ণশীর্ণ ছেঁড়া কাপড় ঠিক একই নামাজের কাতারে একজন ধনী ব্যক্তি দাঁড়ায়, যার পরনে দামি কাপড় ও সুগন্ধি। শুধু ধনী-গরিব নয়, ছোট-বড়, বন্ধু-শত্রু,।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-নিু কর্মচারী, ফকির-বাদশা, সব মুসলিম সব বিভেদ ভুলে মহান রবের ডাকে সাড়া দিতে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায়। সবাই আল্লাহর কর্তৃত্বের কাছে প্রকাশ্যে মাথানত করে। এটিই নামাজের আসল সৌন্দর্যের প্রতিফলন। নামাজ সর্বাপেক্ষা উত্তম আমল এবং বেহেশতের চাবিকাঠি। তাই বলা যায়, নামাজ হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।

শেয়ার করুন