বাল্যবিবাহের শিকার আছিয়া বিবির লেখাপড়ার ইতি ঘটে ১৩ বছর বয়সেই। তবে তাঁর ইচ্ছা ছিল সময়-সুযোগ পেলে লেখাপড়া শুরু করার। সংসারে তাঁর এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচন করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নিজের ইচ্ছা পূরণে শুরু করলেন পড়াশোনা। এবার ৩৫ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
আছিয়া বিবি রাজশাহীর বাগমারার কোয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও যোগিপাড়া ইউপির সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন আছিয়া বিবি। তিনি উপজেলার ভবানীগঞ্জ কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে এসএসসি (ভক) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। গত শনিবার সকালে চানপাড়া আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে আছিয়া বিবিকে অন্য পরীক্ষার্থীদের পাশে বসে পরীক্ষা দিতে দেখা যায়।
কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্ষ পরিদর্শক দায়েম উদ্দিন বলেন, আছিয়া বিবি তাঁর কক্ষের পরীক্ষার্থী হলেও তাঁকে তিনি ‘আপনি’ সম্বোধন করেছেন। আছিয়া বিবি ভালোভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছেন বলে তাঁদের জানিয়েছেন।
চানপাড়া আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব ও ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আছিয়া বিবি জ্যেষ্ঠ পরীক্ষার্থী। তিনি নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দিয়ে চলে যান। ভর্তির সময় তাঁর আগ্রহ দেখে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ক্লাসে না এলেও মাঝেমধ্যে হাজিরা দিয়ে যান। এ বয়সে তাঁর পাঠে আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে।
আছিয়া বিবি বলেন, আগে থেকেই লেখাপড়ার আগ্রহ থাকলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর এটা বেড়ে গেছে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সংসারের ঝামেলা কিছুটা কমিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে শুরু করেন তিনি। এলাকার লোকজনের সঙ্গে মিশতে গিয়ে অনেক সময় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসে। সমাজে শিক্ষিতদের মূল্যায়নও করা হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কাজে শিক্ষিত জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এসব থেকে শুধু তিনি নিজে নন, তাঁর ইউনিয়নের লোকজনও বঞ্চিত হন। তাই লেখাপড়া শেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। এসব কারণে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। যত দূর পারেন, লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন আছিয়া।
যোগিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান বলেন, শুধু লেখাপড়া নয়, প্রতিটি কাজে আছিয়া বিবির আগ্রহ দেখে অবাক হতে হয়। তিনি কোনো কাজে হার মানতে নারাজ। সবকিছুতে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন, সফলও হন। পরীক্ষা শেষে তিনি ইউপিতে এসে বিভিন্ন কাজে অংশ নেন।