২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৪৫:৫৮ অপরাহ্ন
ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দিলেও বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৬-২০২২
ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দিলেও বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ব্যাংক ও খোলাবাজারসহ সর্বত্রই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ডলারের বাজারের অস্থিরতা কাটিয়ে বাজার স্থিতিশীল করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সেটি কার্যকর হচ্ছে না। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে করে এলসি খোলা কিংবা আমদানি পণ্যের পেমেন্ট পরিশোধের জন্য তাদের অনেকে বেশি দরে ব্যাংক থেকে ডলার নিতে হচ্ছে।

আবার খোলা বাজার অর্থাৎ কার্ব মার্কেটেও আজ বুধবার ডলার কেনা হয়েছে ৯৬/৯৭ টাকা দরে, যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য বেশি।

অন্যদিকে মানি একচেঞ্জগুলো বলছে তারা ডলার ৯৫ টাকায় ক্রয় করছে আর বিক্রি করছে ৯৭ টাকায়।

ব্যাংকগুলো বলছে, যে দর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করে দিয়েছে, তা তাদের কেনা দরের চেয়ে অনেক কম এবং সে কারণে এখন ডলারের আন্ত:ব্যাংক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে যেসব ব্যাংকের ডলার দরকার হচ্ছে তাদের নির্ধারিত দরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং খোলা বাজার উভয় জায়গাতেই টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। মূলত কোভিড পরবর্তী সময়ে আমদানি অনেক বেড়ে যাওয়াতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিলো।

ডলারের সাথে সাথে অন্য প্রায় সব বৈদেশিক মুদ্রা যেমন পাউন্ড, ইউরো, সৌদি রিয়াল, কুয়েতি দিনার এবং ভারতীয় মুদ্রারও দাম বেড়ে গিয়েছিলো ব্যাংক ও খোলাবাজারে।

এমন প্রেক্ষাপটে রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের দাম ৮৯ দশমিক ১৫ টাকা ঠিক করে দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। আর আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রির জন্য রেট করা হয়েছিলো ৮৯ টাকা। আর মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে বলা হয়েছিলো এ দুটির মধ্যে সমন্বয় করে ডলার বিক্রির জন্য।

বাস্তবতা কী, ব্যবসায়ীরা কত দামে কিনছেন?

বাস্তবতা হলো কোন ক্ষেত্রেই ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দর অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না।

বরং নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি করা পণ্যের পেমেন্ট দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রামের শীর্ষ স্থানীয় আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন মঙ্গলবারও তাকে অনেক বেশি দামে ডলার কিনতে হয়েছে ব্যাংক থেকে।

“যে দর ঠিক করে দেয়া হয়েছে তার ধারে কাছেও নেই। পেমেন্ট দেয়ার জন্য অনেক বেশি দামে কিনেছি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

জানা গেছে মঙ্গলবার ৯১/৯২ টাকায় ব্যাংকগুলো ডলার দিয়েছে আজ বুধবার তার দামও আরও বেড়েছে। যদিও ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ইসলামী ব্যাংক অবশ্য দাবি করেছে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দরেই ডলার দিয়েছে এলসি খোলা কিংবা আমদানি পেমেন্ট পরিশোধের ক্ষেত্রে।

কেন কার্যকর হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দর

ব্যাংকগুলো বলছে তাদের হাতে যে ডলার আছে সেগুলো আরও অনেক বেশি দামে কেনা এবং সেগুলো তারা রেখেছেন তাদের গ্রাহকদের ভবিষ্যতে দেবেন বলে।

এর ফলে ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত দরে ডলার দিয়ে সহায়তা করছে।

কিন্তু রেমিট্যান্স ও রপ্তানি থেকে কেনা ডলার এখন কম দামে বিক্রি করতে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো। এ কারণেই কেউ বেশি দামে কিনতে চাইলেই কেবল ব্যাংকগুলো তাদের ডলার দিচ্ছে। এ কারণেই আমদানি পেমেন্ট পরিশোধে ব্যবসায়ীদের বেশি দাম দিয়ে ডলার নিতে হচ্ছে।

এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি অনেক কম হওয়ার কারণে আন্ত:ব্যাংক লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে।

“আমরা রপ্তানি ও রেমিটেন্স থেকে ডলার কিনি। সেখান থেকে বেশি দামে কিনে কম দামে কীভাবে বিক্রি করবো। আবার যেসব ব্যাংকের হাতে ডলার আছে তারা তো ৯৫/৯৬ টাকা দরে কিনেছে। এর কম দামে তারা কীভাবে অন্য ব্যাংককে ডলার দেবে? এসব কারণেই দরটা কার্যকর হচ্ছে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি বলছেন নির্ধারিত ৮৯ টাকা ২০ পয়সা দরে এক্সচেঞ্জ কোম্পানি থেকে রেমিট্যান্স ডলার কিনবে ব্যাংকগুলোকে কিন্তু ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে সাড়ে ৯৩ টাকায় আর মানিগ্রাম বিক্রি করছে ৯৫ টাকায়।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর সাথে আলোচনা করেই। ভবিষ্যতে যদি সেটি পর্যালোচনার প্রয়োজন হয় সেটিও আলোচনা করেই করা হবে।

“কেন্দ্রীয় ব্যাংক উনাদের (ব্যাংক) প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করেই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং আমরা আশা করছি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত দরেই আন্ত:ব্যাংক লেনদেন হবে। ভবিষ্যতে কোন পর্যালোচনার দরকার হলে সেটিও আলোচনা করেই করা হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

কেন ডলারের দাম বেড়েছিলো

মূলত কোভিডের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর আমদানি বিশেষ করে ভারী যন্ত্রপাতির আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে অনেক।

এছাড়া খাদ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বেড়েছে। এসব কিছু মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের ওপর চাপ পড়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন।

এছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতির তীব্রতা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কমে আসায় বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হচ্ছে, যে কারণে মানুষ বিদেশ ভ্রমণে বেশি যাচ্ছে। এর সাথে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা।

এছাড়া গত কয়েক মাসে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কমার সাথেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

শেয়ার করুন