২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:২৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
সুবিধা বাতিল না করে এলডিসি উত্তরণকারীদের পুরস্কৃত করা উচিত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৩
সুবিধা বাতিল না করে এলডিসি উত্তরণকারীদের পুরস্কৃত করা উচিত

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে ২০২৬ সালে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে। তখন কিছু বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এটাকে অবশ্য ভালো কাজের শাস্তি হিসেবেই দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এলডিসি উত্তরণে যারা দক্ষতার পরিচয় দেবে তাদের শাস্তি নয়, পুরস্কৃত করা উচিত। ভালো করলে শাস্তি পেতে হবে, এটা দুঃখজনক।’ কাতারের দোহায় গতকাল ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে ব্রিফ করে এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

এলডিসি-৫ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-৩২৫) স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় কাতার সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি এবং দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে সফরকালীন আবাসস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা উড়োজাহাজটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দোহার উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এলডিসি-৫ সম্মেলনে অংশগ্রহণ ছাড়াও কাতারের আমিরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। সেখানে জ্বালানি খাতে সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সম্মেলনে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে সহজ উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন চাইবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৫-৯ মার্চ দোহায় অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে এ গ্রুপের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে এটি ঢাকার শেষ অংশগ্রহণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ লাভ করতে যাচ্ছে। তখন বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরের প্রথম দিন কিউএনসিসিতে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট সাবা কোরোসি এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রশাসক আচিম স্টেইনারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণে আমরা ভালো দক্ষতা দেখাচ্ছি, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও এলডিসি উত্তরণ করলে আমাদের বিভিন্ন রকম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এলডিসি উত্তরণের ফল হিসেবে সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে আমাদের শাস্তি দেয়া উচিত নয়। বরং যারা এক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাল তাদের পুরস্কৃত করা উচিত। এ বিষয়টা বিবেচনার জন্য আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা দুঃখজনক যে আমি ভালো করছি বলে শাস্তি পেতে হবে। এটা ঠিক না।’ 

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গত ছয় বছরে কোনো রোহিঙ্গা ফেরত যায়নি। প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব ঐকমত্য পোষণ করেছেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগেই রোহিঙ্গাদের দেশে যাওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অনেকেই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক সরবরাহ, মানব পাচার এবং সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এটা আগামীতে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের নিজেদের টাকায় তাদের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জায়গা রয়েছে সেখানে। সহায়তা বাড়ালে ভাসানচরে আরো লোক নিয়ে যেতে পারব। জাতিসংঘ মহাসচিব তখন বলেছেন, আপনারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো জায়গায় ধর্মের নামে উগ্রবাদের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বিশেষ করে তিনি ফিলিস্তিনের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বলেছেন, যারা উগ্রবাদী তাদের কোনো ধর্ম নেই, তাদের কোনো সীমারেখা নেই। ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে সবাই লাভবান হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস উভয়েই উভয়ের প্রশংসা করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যে জাতিসংঘ খুবই প্রশংসা করেছে। কভিড পরিস্থিতি এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধকালীন সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেছেন এন্তোনিও গুতেরেস।’

এদিকে সফরের দ্বিতীয় দিন আজ কিউএনসিসিতে আয়োজিত এলডিসি-৫ সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব, সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও এলডিসি গ্রুপের বর্তমান চেয়ার মালাউইর প্রেসিডেন্টও বক্তব্য দেবেন। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথে থাকা তিন এশীয় দেশ বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওসের যৌথভাবে আয়োজিত ‘২০২১ সালের উত্তরণের জন্য টেকসই ও সহজ রূপান্তর’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি কিউএনসিসিতে বিনিয়োগ ও অংশীদারত্বের ওপর এলডিসি-৫ সম্মেলনে উচ্চপর্যায়ের নেতাদের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। এছাড়া তিনি এদিন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেল রেবেকা গ্রিনস্প্যান এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব ডোরেন বোগদান-মার্টিনের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেন্ট রেজিস দোহায় আগামীকাল শেখ হাসিনা ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রী মালাবির প্রেসিডেন্ট ড. ল্যাজারাস ম্যাককার্থি চাকওয়েরার সঙ্গেও বৈঠক করবেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিজনেস সামিট, কিউএনসিসিতে ‘স্মার্ট ও উদ্ভাবনী সমাজের জন্য এলডিসিতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি পার্শ্ব ইভেন্টেও তিনি অংশ নেবেন। এছাড়া আবাসিক স্থানে আঞ্চলিক দূত সম্মেলনেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সফরের চতুর্থ দিন আগামী মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ অতিথি হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সমন্বয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সংলাপে যোগ দেবেন। এছাড়া ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ড্যান জর্জেনসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ‘সহজ ও টেকসই উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারত্ব: স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে তিনি কাতারে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন।

কাতার সফর শেষে আগামী বুধবার স্থানীয় সময় সকালে দোহা থেকে রওনা হয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

শেয়ার করুন