২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১২:২৯:০৭ অপরাহ্ন
বাগমারায় কর্মীবান্ধব নেতাকে চায় তৃণমূল
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৩-২০২৩
বাগমারায় কর্মীবান্ধব নেতাকে চায় তৃণমূল

২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনর্বিন্যাসে বাগমারা উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় রাজশাহী-৪ সংসদীয় আসন। জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা বাগমারায় রয়েছে দুইটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন। পুনর্বিন্যাসের আগে আসনটি ছিল বাগামরা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে।

১৯৯১ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত রাখাল চন্দ্র দাস। ৯৬ সালে মনোনয়ন পান এক সময়ের বাম সংগঠনের নেতা ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা এ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন এবং ২০০১ সালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেছা তালুকদার। আর ২০০৮ সাল থেকে টাকা তিন বার মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী এনামুল হক।

এ আসনে ১৯৯১ সালে সাংসদ নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত সরদার আমজাদ হোসেন। ১৯৯৬ সালে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত বিএনপি নেতা আবু হেনা। তিনি বিএনপির মনোনয়নে পর পর দুইবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জঙ্গি ইস্যু নিয়ে নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে দল থেকে বহিস্কার হন তিনি। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েন আবু হেনা। সেখানে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুল গফুর। এ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী এনামুল হকের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

আওয়ামী লীগ

এক সময়ের জঙ্গি ও চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় বারেরমত সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি দুইবারের এমপি প্রয়াত আবু হেনাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে বলিষ্ঠ প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপি এনামুল হকের বিকল্প নেই। মাঠ পর্যায়ে রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এলাকার হাজার হাজার গরিব অসহায় মানুষকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে বাগমারার মানুষদের কাছে বড় একটি জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও নির্বাচনে এলাকায় তিনি সবচেয়ে বেশী সময় দিনে তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। ফলে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের কাছে এমপি এনামুল এখন এ অঞ্চলে অনেক জনপ্রিয় নেতা বলেই পরিচিত।

এ আসনে এবার এনামুল হক ছাড়াও আরও দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন, বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। এদের মধ্যে রাজনীতির মাঠে বেশী সক্রিয় আবুল কালাম আজাদ। নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ আর সভা-সমাবেশ করে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তিনি।

বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ আসনে যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সবার চেয়ে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে স্থান করে নিয়েছেন ইঞ্জিনিয়র এনামুল হক। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করা এর আগে কোন সংসদ সদস্য করেনি। অশান্ত বাগমারাকে শান্ত করাসহ তার নেতৃত্বে বাগমারা আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। এমপি এনামুলের নেতৃত্বে সাংগঠনিক দিক থেকে বাগমারা আওয়ামী লীগ এখন মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাত্রলীগের রাজনৈতি করেছি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের লোকজন বারবার আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ফলে দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমি সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে আছি। রাজনীতিতে আমার ত্যাগ ও অবদান বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে আমি আশাবাদী।’

বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার দলের মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির অন্তত ডজন খানে নেতা। যাদের অনেকই ইতোমধ্যেই ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে সমর্থন পেতে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে মাঠে সক্রিয় রেছেন তিন/চারজন নেতা। তবে এবার নতুন মুখ ও স্থানীয় নেতাকে চায় দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন অধ্যাপক আবদুল গফুর। এর আগে তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ১৫ দিনের মাথায় ওই সংসদ ভেঙ্গে যায়।

এর মাঝে এ আসনে ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা প্রয়াত আবু হেনা। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর কনোনায় মারা যান আবু হেনা। আর বয়সের কারণে বর্তমানে রাজনীতিতে নিস্কৃয় রয়েছেন সাবেক এমপি অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আব্দুল গফুর। তবুও তিনি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। তবে এ আসনে এবার নতুন মুখ আসছে তা অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলের স্থানীয় নেতারা।

এবারও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি সিনিয়র সাইন্টিষ্ট, দেওয়ান ফাঊন্ডেশন চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাগমারা উপজেলার সাবেক সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক ও বাগমারা উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক কামাল হোসেন, রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল।

এদের মধ্যে রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া ও অধ্যাপক কামাল হোসেন। বিশেষ করে দলীয় সব ধরণের কর্মসূচীতে তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে অংশ নেন।

মাঠে সক্রিয়দের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বাসে গত বছরের ১ মে ভবানীগঞ্জ সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছি। আমি এ কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।’

দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি কামাল হোসেন বলেন, ‘বাগমারার তৃণমুলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে আছি। তারাও আমার সাথে আছেন। দলীয় সব কর্মসূচীতে তাদের নিয়ে অংশ গ্রহন করে থাকি। এছাড়াও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে সরকার পতনের আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে।’

ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘বাগমারা বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নতুন মুখ চায়। তাদের চাওয়া থেকে এবারও সংসদীয় আসনে মনোনয়ন চাইবো। জনপ্রিয়তা বিবেচনায় দল মনোনয়ন দিলে এবার আমি মনোনয়ন পাবো। আমি মনোনয়ন পেলে এ আসনটি আবার বিএনপির কাছে ফিরে আসবে বলে আশা করছি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে ছাড়া এবার নির্বাচনে যাবে না বিএনপি উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, ‘ভোট হলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবো। বাগমারায় দলের অবস্থান ভালো। এখানে দলের বাইরে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার সুযোগ নেই। দল থেকে যে মনোনয়ন পাবে সে বিজয়ী হবেন।’

জাতীয় পার্টি

এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব। এবার আগেও তিনি একাধিকবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এর আগে পৌরসভা, উপজেলা ও এমপি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন তিনি। আবু তালেব ছাড়াও এ আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. আবু ইউসুব সেলিম।

আবু তালেব বলেন, এ আসন থেকে দুইবার জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগামীতে আমি এ আসনে নাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। এখানে জাতীয় পার্টির অবস্থান আগে যে কোন সময়ের চেয়ে এখন ভাল। আশা করছি, নিরপেক্ষ নির্বাচনে হলে আগামীতে নাঙ্গলের পক্ষেই থাকবে বাগমারাবাসী।

শেয়ার করুন