২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১১:১২:৪১ পূর্বাহ্ন
সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের বাইরে বিজিবির গুলিবর্ষণে নির্বাহী তদন্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৩-২০২৩
সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের বাইরে বিজিবির গুলিবর্ষণে নির্বাহী তদন্ত

সীমান্তের আট কিলোমিটারের বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মাধ্যমে গুলিবর্ষণের ঘটনার নির্বাহী তদন্তের (এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও যুগোপযোগী করা হচ্ছে টাউট আইন ১৮৭৯ ও বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭। মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এ তফসিলভুক্ত করা হবে দণ্ডবিধি ১৭০/১৭১/৪১৯। জেলের অভ্যন্তরে চালু হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সুবিধা। কারাবন্দীরা পাবে ভিডিও কলের সুবিধা। গত ২৪-২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব আমলে নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সম্মেলনের তৃতীয় দিবসের ষষ্ঠ কার্যঅধিবেশনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসক বলেন, সীমান্তের আট কিলোমিটারের বাইরে বিজিবি সদস্য কর্তৃক গুলিবর্ষণের ঘটনা হলে পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ এর ন্যায় বিজিবির ক্ষেত্রেও গুলিবর্ষণের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে নির্বাহী তদন্তের (এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারি) বিধান করা যেতে পারে।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক বলেন, বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭ এর ০৩ ধারা সংশোধনপূর্বক বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে জুয়া খেলাকেও জুয়ার স্থান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭ এর বিভিন্ন ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড প্রদানের বিধান রাখা যেতে পারে। টাউট আইন ১৮৭৯ এর ৩৬ ধারায় অন্যান্য দফতরের টাউট/দালালদের প্রকাশ্য তালিকা প্রণয়ন ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের বিধান রাখা যেতে পারে। টাউট আইন ১৮৭৯ এর ০৬ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাসসহ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা যেতে পারে। নরসিংদী জেলার পাচদোনাতে একটি আধুনিক ফায়ার স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।


সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এ দণ্ডবিধি ১৭০/১৭১/৪১৯ ধারা তফসিলভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় অর্থদণ্ডের পরিমাণ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেন। কারাগারে বন্দীদের সাথে সাক্ষাতের সুবিধার্থে ভিডিওকলের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনদের কথা বলার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক। মাদকসেবী কয়েদিদের জন্য জেলখানার অভ্যন্তরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সুবিধা চালুর প্রস্তাব করেন জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক। উপজেলা পর্যায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা পদায়ন এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক।
এ অধিবেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুদায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সে সময়ে কাজ করতে হবে। অনলাইনে সাইবার ক্রিমিনালরা প্রবেশ করে বিভিন্ন নতুন ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে। পুলিশকেও এসব অপরাধীদের মোকাবেলায় দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। নরসিংদীর রায়পুরার যাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হয় সে বিষয়ে পুলিশকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনলাইন জুয়া বন্ধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। মাদক নির্মূলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি কয়েদি রয়েছে। নিরাপত্তাবিষয়ক কোনো সমস্যা হলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একসাথে বসে সমস্যা সমাধানে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি।


অধিবেশনের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে সীমান্তের আট কিলোমিটারের বাইরে বিজিবি সদস্য কর্তৃক গুলিবর্ষণের ঘটনা হলে পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ এর ন্যায় বিজিবির ক্ষেত্রেও গুলিবর্ষণ যৌক্তিকতা যাচাইয়ে এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারি, বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭ এর কতিপয় ধারা সংশোধন করে যুগোপযোগী করা, টাউট আইন, ১৮৭৯ এর কতিপয় ধারা সংশোধন করে যুগোপযোগী করা, দণ্ডবিধি ১৭০/১৭১/৪১৯ মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এ তফসিলভুক্ত করা, কারাগারে বন্দীদের সাথে সাক্ষাতের সুবিধার্থে ভিডিওকলের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা, ভোলা জেলায় আধুনিক নিরাপত্তা সুবিধা সম্বলিত কারাগার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ, মাদকসেবী কয়েদিদের জন্য জেলখানার অভ্যন্তরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সুবিধা চালু, রাঙ্গামাটি জেলার সদর, লঙগদু, বরকল, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলায় নৌ-ফায়ার স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে ডুবুরি টিম গঠনের জন্য ডুবুরি পদ সৃজন ও বান্দরবান জেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে ১টি ৪৩০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর হুইলার গাড়ি, একটি ফোর হুইলার পাম্পটানা গাড়ি, একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি ফোম টেন্ডার গাড়ি প্রদান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার ফাইটারদের জন্য ওয়াকিটকি প্রদান, উপজেলা পর্যায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা পদায়ন এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অবহিত করা এবং সোনাহাট স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

শেয়ার করুন