২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:০২:২৬ অপরাহ্ন
যে কারণে আরাভ খানকে দেশে ফেরানো কঠিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
যে কারণে আরাভ খানকে দেশে ফেরানো কঠিন

আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম। বর্তমানে আলোচিত নাম। পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি তিনি। পাঁচ বছর আগে ওই হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পালান প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখান থেকে আসল নাম বদলে তৈরি করেন ভারতের পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্টে পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ে। সম্প্রতি দুবাইয়ে তার জুয়েলারি ব্যবসার উদ্বোধনে তারকাদের উপস্থিতি কেন্দ্র করে আসেন আলোচনায়। আরাভ খান এখন আন্তর্জাতিকভাবে মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।


গত ২৪ মার্চ আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ ইস্যু করে। এতে তাকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ এক ধাপ এগিয়ে গেলো বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। যদিও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে রয়েছে বেশকিছু অনিশ্চয়তা।





জানা যায়, ইন্টারপোল নিজে কাউকে গ্রেফতার করে না। সদস্য রাষ্ট্রের পুলিশকে অনুরোধ জানায় ওই অপরাধীকে যেন আইনের আওতায় নেওয়া হয়। তখন ওই দেশের পুলিশ তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আরাভ খানের দেশে ফেরানো নির্ভর করছে বাংলাদেশ, ভারত ও দুবাই সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক বা বোঝাপড়ার ওপর। তাকে দেশে ফেরাতে ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করতে হবে। দুবাই সরকার আরাভ খানকে বাংলাদেশের কাছে দিতে রাজি হলে তাকে সেখানে গ্রেফতার করতে হবে। এরপর বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে ইস্যু করা ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে দেশে ফেরানো যাবে এই অপরাধীকে।



ইন্টারপোলের রেড নোটিশে আরাভের ছবি, লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম তারিখ, বয়স, জাতীয়তা ও অভিযোগের তথ্য রয়েছে। ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই গেলেও রেড নোটিশে জাতীয়তা হিসেবে লেখা হয়েছে বাংলাদেশি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে লেখা আছে- মার্ডার (হত্যা)। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় এখন রবিউলসহ মোট ৬৩ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। রবিউল ওরফে আরাভ খানই এ তালিকার সবশেষ ব্যক্তি।




দুবাইয়ের একটি সূত্র জানায়, আরাভ খান ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির খবরে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। দুবাইয়ে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় আছেন সেটাও জানা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পলাতক আরাভ খান নজরদারিতে আছেন।



গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দুবাইয়ে পলাতক আরও বেশ কয়েকজন আসামিকে দেশে ফেরাতে সাফল্য দেখাতে না পারায় রেড নোটিশ জারির পরও আরাভকে ফেরানো নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে। আরাভ যেহেতু ভারতীয় পাসপোর্টধারী, তাই তাকে কীভাবে ফেরানো হবে তা নিয়েও রয়েছে নানান আলোচনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে আরাভ খান নামের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের। এটি করা গেলে তাকে দেশে ফেরানো সহজ হবে বলে মনে করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলেও চলছে যোগাযোগ।



আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলাতক যে কোনো আসামিকে কূটনৈতিক ও পুশব্যাকের (কোনো দেশ নিজেদের উদ্যোগেই যদি ফেরত পাঠায়) মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা যায়। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকলেও অপরাধীকে ফেরানো যায়। তবে চুক্তি থাকলে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে অপরাধীকে ফিরিয়ে আনা তুলনামূলক সহজ। চুক্তি না থাকলে অপরাধী ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতি লাগবে। এক্ষেত্রে প্রথম বাধা দুবাইয়ের বর্তমান নীতি। উদার বাণিজ্যনীতির কারণে দুবাই বিভিন্ন দেশের ধনীদের স্বর্গরাজ্য। আরাভ খানকে ফিরিয়ে দিলে অন্য ব্যবসায়ী ও অবৈধ অর্থের মালিকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।



পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আরাভ ভারতের যে ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং যে কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন, সে বিষয়েও তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আশা করা যায়, শিগগির আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




পুলিশের চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আরাভ খান নিজের পরিচয় গোপন রেখে কোনোভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। ওই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত গেছেন। এই প্রেক্ষাপটে যত দ্রুত সম্ভব আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।


ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা। এনসিবি সূত্রে জানা যায়, রবিউলের জন্ম বাগেরহাটের চিতলমারীতে মামার বাড়িতে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বাগেরহাট উল্লেখ করা হয়েছে। রেড নোটিশ জারি করতে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো আবেদনে রবিউলের জাতীয় পরিচয়পত্রের বাংলা ও ইংরেজি কপি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। তাই তার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ীই ইন্টারপোলের নোটিশে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।



পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের কাছে বাংলাদেশ যে আবেদন করেছিল তা গ্রহণের পর রেড নোটিশের তালিকায় তার নাম উঠেছে। এখন বাকি কাজ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে। তাকে দেশে ফেরাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ইন্টারপোলের পাশাপাশি ভারতকে আরাভের বিষয়ে নথিপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারতে পাঠানো হয়েছে আরাভ ও তার মা-বাবার বাংলাদেশি নাগরিকত্বের সনদের অনুলিপি। ভারত ও দুবাইয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি আরাভ খান চিহ্নিত হয়েছেন, তিনি রবিউল ইসলাম এবং হত্যা মামলার আসামি। আরাভ খান ভারতে থাকলে তাকে ফিরিয়ে আনা সহজ হতো। যেহেতু ভারতে নেই সেহেতু দুবাই থেকে ভারতের মাধ্যম হয়ে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। দুবাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। আরাভ খানকে যেভাবে বাংলাদেশ আসামি হিসেবে দেখছে দুবাই-ভারত সেভাবে নাও দেখতে পারে। তবে তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে দুবাইয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

শেয়ার করুন