২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:২২:৫৯ অপরাহ্ন
জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে কাজ ট্রায়াল রান অক্টোবরে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৪-২০২৩
জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে কাজ ট্রায়াল রান অক্টোবরে

স্বপ্নপূরণের পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ। ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ইতোমধ্যে ৭৫ কিলোমিটারের (কক্সবাজার অংশে ৫০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম অংশে ২৫ কিলোমিটার) কাজ শেষ হয়েছে। এখন অবশিষ্ট ২৫ কিলোমিটারের কাজ চলছে বলে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে। এই কাজ আগামী জুন–জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার টার্গেট আছে। আগস্ট–সেপ্টেম্বরে ফিনিশিং ওয়ার্কসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে অক্টোবরে ট্রায়াল রান এবং নভেম্বর–ডিসেম্বরে ট্রেনে করে কক্সবাজার যাওয়া যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

প্রকল্পের মোট ৯টি স্টেশনের মধ্যে দুটি পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ৫টির অবকাঠামো কাজ সম্পন্নের পর ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। বাকি দুটির অবকাঠামোর কাজ এখনো চলছে। বলতে গেলে সবগুলো স্টেশনের কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। কক্সবাজারের মূল স্টেশন ঝিলংজায় দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।

এর আগে চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, নির্ধারিত সময়সীমার আগে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজারে ট্রেন যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।

দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটার জুড়ে রেললাইন বসেছে অনেক আগে। চট্টগ্রাম অংশেও ২৫ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাকি আছে আর ২৫ কিলোমিটার। এই ২৫ কিলোমিটারের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু স্লিপার ও রেল বিট বসবে। আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে পারব। আগস্ট–সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে ফিনিশিং ওয়ার্কসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করে অক্টোবরে আমরা ট্রায়াল রান উদ্বোধন করতে পারব বলে আশা করছি। প্রথমত আমরা জোড়া ট্রেন দিয়ে হলেও চালু করে দেব।

এদিকে সমুদ্রসৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের প্রায় ২৯ একর জায়গাজুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি এখন দৃশ্যমান। ঝিনুকের আদলে নির্মিত হয়েছে এই স্টেশন। এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয় তলা বিশিষ্ট স্টেশনটির সম্পূর্ণ ফ্লোর এরিয়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট। রয়েছে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা। ভবনটিতে এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধন, ফায়ার ফাইটিং, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ শেষ মুহূর্তের কাজ। এ পর্যন্ত স্টেশনটির নির্মাণ কাজের প্রায় ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আইকনিক এই স্টেশনটি নির্মাণের সময় চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ–সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী নিয়োজিত ছিলেন। পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে দিনে এসে আবার ফিরে যেতে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের অর্ধেকই আসেন একদিনের জন্য। এ সময় তারা নিজেদের মালপত্র রাখার নিরাপদ জায়গা পান না। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে স্টেশনে রাখা হচ্ছে লাগেজ ও লকার সিস্টেম। এছাড়া থাকছে আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা। থাকছে সাধারণ ও ভিআইপিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ড্রপ এরিয়া। বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও থ্রি হুইলারের জন্য আলাদা পার্কিং এরিয়া। থাকছে সুপারমার্কেট, ফার্মেসি, এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ ছাড়াও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা কেন্দ্র।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এই মেগা প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের দোহাজারী–কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে রেললাইন নির্মাণ কাজটি করছে। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড যে অংশের কাজ করছে তা দ্রুত শেষ হয়েছে। এখন তমা কনস্ট্রাকশনের অংশের কাজ চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী–চকরিয়া অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে সাঙ্গু নদীর উপর একটি, মাতামুহুরী নদীর উপর দুটি এবং বাঁকখালী নদীতে একটি বড় রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

শেয়ার করুন