ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অপর অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে দেশটি। দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয় দুটি নিয়ে আলোচনা চলছে। আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) ২১তম সভায় এ দুই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
খুলনায় অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় নেতৃত্ব দেবেন বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে দেশটির বিদ্যুৎ সচিব অলোক কুমার। সভায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা-সংক্রান্ত চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নতুন পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভারতের কাটিহার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে আবার দেশটির বরানগর ৭৬৫ কেভি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিড ইন্টারকানেকশনের মাধ্যমে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করছে ভারত। কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের প্রস্তাবিত করিডোর লাইনটি ৭৬৫ কেভির আর বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইন এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০০ কেভির। ফলে বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে ভারতের প্রস্তাবিত গ্রিড লাইনের সিঙ্ক্রোনাইজেশন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে এখনও আইনি, বাস্তবায়ন এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আইনি ও পরিচালনাগত দিক খতিয়ে দেখতে দুই দেশের ছয় সদস্যের একটি
কমিটি কাজ করছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, এই লাইন ভবিষ্যতে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ সঞ্চালনে ব্যবহৃত হতে পারে। তাই বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনে (জেআরসি) আলোচনা করার অনুরোধ করেছে ঢাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ লাইন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই, হাইড্রোলজিক্যাল, ওয়াটার মডেলিং অধ্যয়ন এবং পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রাপ্তির জন্য একটি ডাটা-শেয়ারিং চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাবও করেছে। আজকের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রাথমিকভাবে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এই বিদ্যুৎ ভারত হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে দেশে আসবে। এ ছাড়া নেপালে ভারতের জিএমআর গ্রুপের নির্মিত ৯০০ মেগাওয়াটের আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৯ সালে জিএমআরের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ জন্য দিল্লির সঙ্গে ঢাকা ও কাঠমান্ডুর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে হবে।
এদিকে, ভুটান থেকেও জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিদ্যুৎও আনতে হবে ভারতের ওপর দিয়ে। এ জন্য বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে ভারত বলছে, বাংলাদেশ তাদের প্রস্তাবিত কাটিহার-পার্বতীপুর-বরানগর লাইনের অনুমতি দিলেই তারা নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চুক্তি করবে। জেএসসির বৈঠকে এ বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে বাংলাদেশ ও ভারত।
এবারের সভায় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভ্যাবতা যাচাই, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের মূল্যায়ন, আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্যের অগ্রগতি পর্যালোচনা, বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাও গতকাল বুধবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও এসব বিষয় নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। তবে আজকের সভায় বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ২০তম সভা গত বছরের ২৮ থেকে ২৯ মে ভারতে অনুষ্ঠিত হয়।