২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:২৪:৫৬ অপরাহ্ন
কৃষি, চিকিৎসায় ব্যবহার হবে ন্যানো টেকনোলজি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৫-২০২৩
কৃষি, চিকিৎসায় ব্যবহার হবে ন্যানো টেকনোলজি

কৃষি, চিকিৎসা এবং বস্ত্রশিল্পে ন্যানো টেকনোলজি প্রয়োগ করতে চায় সরকার। এজন্য এ বিষয়ে গবেষণায় বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সাভারে স্থাপন করা হবে একটি ইনস্টিটিউট। সেখানে ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস তৈরি ও ক্যারাক্টারাইজেশনের আধুনিক সুবিধা সংবলিত যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ন্যানো টেকনোলজিতে দক্ষ জনবল তৈরি করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ইনস্টিটিউট অব ন্যানো টেকনোলজি স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৩৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে সাভারের গণকবাড়িতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইনস্টিটিউটটি স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনার বিষয়ে বলা হয়েছে, বৃহত্তর পরিসরে ন্যানো টেকনোলজির সার্বিক প্রয়োগের উদ্দেশ্যে একটি ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ন্যানো প্রযুক্তি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং নবীন বিজ্ঞানী বা গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করার লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ন্যানো প্রযুক্তি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করা এবং নবীন বিজ্ঞানী বা গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করা এবং দক্ষ জনবল তৈরি করা। এ ছাড়া কার্যকর ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস প্রস্তুতকরণ ও তাদের বিভিন্ন গুণগত এবং প্রায়োগিক বৈশিষ্ট্য কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা সুবিধা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন।

ইনস্টিটিউটটি স্থাপন করা হলে চিকিৎসাসেবায় ব্যবহার হবে ন্যানো টেকনোলজি। ন্যানো ম্যাটেরিয়ালসের বাস্তবমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা। কৃষিজমির উর্বরতা বাড়ানোসহ ফসলের উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধি এবং সুরক্ষার জন্য ন্যানো

ফার্টিলাইজার, ন্যানোসেন্সর, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস উৎপাদন, বিতরণ ও গবেষণা সেবা সম্প্রসারণ করা। এ ছাড়া বস্ত্রশিল্পেও ব্যবহার হবে ন্যানো টেকনোলজি। বস্ত্রশিল্পে ন্যানো প্রযুক্তিভিত্তিক কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত রাখা যাবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৯টি বৈদেশিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা হবে। ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার বর্গফুটের ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনে বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য কাজে ৩০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ১৯৭টি স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনতে ২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ৮৯৪টি আসবাবপত্র কিনতে ৫ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ২৮৮ জন পরামর্শক সেবার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ৫৮ জনের বিদেশ প্রশিক্ষণে ২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে এবং ১৪০ জনের দেশে প্রশিক্ষণে ৪২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মোতাবেক উন্নত অর্থনৈতিক কার্য সম্পাদনের জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর আরও বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ক্লিন এনার্জির প্রসার, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও একাডেমিক ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা এবং মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি হবে। সে বিবেচনায় প্রকল্পটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ন্যানো প্রযুক্তিবিষয়ক ক্ষেত্রগুলো প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, যা সরকারের গৃহীত এসডিজি-২০৩০, রূপকল্প-২০৪১ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। বর্ণিতাবস্থায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ইনস্টিটিউট অব ন্যানো টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, আধুনিক গবেষণাগার সংবলিত একটি পূর্ণাঙ্গ ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপনের মাধ্যমে ন্যানো টেকনোলজিবিষয়ক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা, কৃষি এবং বস্ত্রশিল্পে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক ন্যানো টেকনোলজি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যানো গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কর্মপরিকল্পনায় ন্যানো প্রযুক্তিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের মানুষের আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ন্যানো প্রযুক্তিনির্ভর কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা-২০৩০ পূরণেও ন্যানো প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শেয়ার করুন