১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৩:৩৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৫-২০২৩
সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য

আগামীতে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য। দেশটির এমন প্রত্যাশার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরাও একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন চাই।


শনিবার (০৬ মে) লন্ডনে হোটেল ক্ল্যারিজে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি জানান, তার দেশ বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।


সাক্ষাতের পরে হোটেল ক্ল্যারিজে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।


এ সাক্ষাতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ছাড়াও দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।


নির্বাচন নিয়ে আলাপের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সম্পর্কে কথা বলেন। তারাও চান একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। ’


একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরাও চাই একটা সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন। আর আমার দল (আওয়ামী লীগ) সব সময় গণতন্ত্রকে সমুন্নত রেখেছে। ’


পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরাই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বলিষ্ঠ একটা অবস্থা তৈরি করেছি। আমাদেরও প্রতিশ্রুতি আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন সবাইকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। সেক্ষেত্রে অন্যরা যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে ভালো।’


বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ, সুন্দর করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার যা যা করার তাই করেছে।


শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির সময় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোট ছিল, সেই ভুয়া ভোট যাতে না হয় সে জন্য বায়োমেট্রিক ফটো আইডি, ফটো যুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন, কেউ যাতে আগে বাক্সে ব্যালট ঢুকাতে না পারে সেই জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করা হয়েছে।


তিনি বলেন, আর অত্যন্ত স্বাধীন এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া যত ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার, স্বচ্ছ-সুন্দর করা হয়েছে।


ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ওয়েস্টমিনিস্টারে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সেটাতে আমরা বিশ্বাস করি। ওয়েস্টমিনিস্টারের মতোই আমিও আমার দেশে প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করেছি। ব্রিটিশ এ সিস্টেম অনুসরণ করে বাংলাদেশে প্রতি বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর চালু করেছি।


রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসন আরোহণ অনুষ্ঠানে যোগদান করায় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি।


ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন জেমস ক্লেভারলি।


যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশীদের প্রশংসা করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষ এদেশে থাকেন। এরা অত্যন্ত ভালো কাজ করছে।


দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে জেমস ক্লেভারলি বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রিটিশের মধ্যে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ব্যবসা, বাণিজ্য সব দিক থেকে আমাদের সম্পর্ক বাড়ছে। গত কয়েক বছরে সেই সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে।


যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথম জেল থেকে বের হয়ে এই লন্ডনে এসেছিলেন। তখন এ দেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। আর সেই থেকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ভালো সম্পর্ক।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটেনের প্রয়াত রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, রাণী সব সময় তার এবং তার ছোট বোনের (শেখ রেহানা) খোঁজ খবর রাখতেন।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানান, শুক্রবার (৫ মে) ‘কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। রাজা বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান।


আব্দুল মোমেন জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা যে মানবিকতা দেখিয়েছেন, নির্যাতিত লোকদের সাহায্য করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি।


ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে। আগামীতেও তারা এই সমস্যা যাতে তাড়াতাড়ি সমাধান হয় সেই জন্য যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে আছে।


রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করে ব্রিফিংয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ব্রিটিশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজুলেশন আনে। তারা এই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই রেজুলেশন তখন পাসও হয়।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ সৌজন্য সাক্ষাতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলির সঙ্গে তার স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।


সৌজন্য সাক্ষাতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম।


টোকিও ও ওয়াশিংটন সফর শেষে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে তার সিংহাসনে আরোহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাতে লন্ডনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


গতকাল শনিবার (৬ মে) লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে টেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।


এর আগে লন্ডন সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (৫ মে) স্থানীয় সময় বিকেলে বাকিংহাম প্যালেসে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের সম্মানে ব্রিটেনের নতুন রাজা ও রানির সিংহাসনে আরোহণপূর্বক সংবর্ধনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকিংহাম প্যালেসে সিংহাসন আরোহণপূর্ব এ সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস।


একই দিন স্থানীয় সময় বেলা ২টার দিকে লন্ডনের পলমলে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মার্লবোরো হাউজে ‘কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে’ যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


মার্লবোরো হাউজের ডেলিগেটস লাউঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে কমনওয়েলথ প্রধান ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।


কমনওয়েলথ নেতাদের এ অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি মার্লবোরো হাউজে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।


গত ২৫ এপ্রিল জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং লন্ডন সফরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী।


জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা গত ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল জাপান সফর করেন।


জাপানে চারদিনের সফর শেষে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৮ এপ্রিল থেকে ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন সফর করেন শেখ হাসিনা। ওয়াশিংটন সফর শেষে লন্ডনে আসেন তিনি।


পরপর তিনটি দেশ সফর শেষে লন্ডন থেকে রওনা হয়ে মঙ্গলবার (৯ মে) সকালে ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন