রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে হঠাৎ আলোচনার জন্ম দিচ্ছে বিএনপির এক সম্ভাব্য প্রার্থীকে ঘিরে। রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই সাইদ হাসানকে ঘিরে এ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে সাইদ হাসান নিজ দলের মধ্যেই সুবিধাবাদি নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ৬ বছর আগে মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। এর পরে আর কোনো পদ পাননি। এমনকি সুবিধাবাদি হিসেবে দলের কাছে পরিচিত পাওয়ায় পরবর্তিতে মহানগর বিএনপির সদস্য পদেও রাখা হয়নি তাঁকে। এই সাইদই আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও সাইদ এ নির্বাচনে অংশ নিবেন কি নিবেন না সেটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাইদ বিএনপির কেউ না এখন। দলটি নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্তে অনড়র থাকায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সাইদের পক্ষে মাঠে নামা তো দূরের কথা, ভোট দিতেও যাবেন না।
অপরদিকে আওয়ামী লীগেরই কয়েকজন নেতা নেপথ্যে থেকে সাইদকে নির্বাচনে অংশ নিতে ভেতর থেকে ইন্ধন দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দলীয় সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজনকে মনোনয়ন দিয়েছে তিনটি দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও কেন্দ্রীয় সভাপতিমÐলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন মুরশিদ আলম ফারুকীকে। এর বাইরে কোনো দল থেকে আর কাউকে এখন পর্যন্ত মনোনয়ন বা সমর্থন দেওয়া হয়নি। তবে এই তিনজনের মধ্যে একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত নানাভাবে নির্বাচনী বৈঠক করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী লিটন।
অন্য দুজন প্রার্থীর পক্ষে বা প্রার্থীরাও কোথাও কোনো প্রকার নির্বাচনী সভা সেমিনার করতে দেখা যায় না। এরই মধ্যে গত দুদিন ধরে হটাৎ আলোচনায় এসেছে বিএনপির সাবেক এক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন বলে। যদিও বিএনপি’র পক্ষ থেকে এ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না বলে এমনকি নির্বাচন বয়কটেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক সাইদ হাসান নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সাইদ হাসান একসময় রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের ভিপি ছিলেন। এর পর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি এবং সেখান থেকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদকও হয়েছিলেন।
রাজশাহী মহানগর যুবদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত টানা প্রায় ১৭ বছর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। তাঁর সময়ে ঠিকাদারী করে টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামায় করেন সাইদ হাসান। ওইসময় তিনি দলের কাছে কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর আপন ভাই নাদিম মোস্তফা ওই সময় মিনুবিরোধী রাজনীতি করলেও ছোট ভাই সাইদ ছিলেন মিনুর কাছের লোক। মূলত সিটি করপোরেশনের টেন্ডার বাগিয়ে নিতেই সাইদ ওই সময় মিনুর কাছের লোক ছিলেন। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পতন হলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত প্রায় ১৫ বছর ধরে সাইদ হাসান ছিলেন নিশ্চুপ। বিএনপির আমলে আয় করা এই ১৫ বছরে খরচ করা দূরে থাক মামলা-মোকদ্দমার ভয়ে দলীয় মিছিল-মিটিংয়েও তাঁকে খুঁজে পাননি নেতাকর্মীরা। ফলে তাঁকে দলের নেতাকর্মী সুবিধাবাদি নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এর ফলে প্রায় ৬ বছর আগে বুলবুল-মিলন কমিটিতে মহানগর বিএনপির কোনো পদ তো দূরে থাক সদস্য পদেও রাখা হয়নি সাইদকে। অথচ আগের কমিটিতেই যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে ছিলেন তিনি। সেই সাইদ এবার রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে মিডিয়ায় নাম আসার পরে দলের নেতাকর্মীরাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এমনকি প্রশ্ন উঠেছে, সুবিধাবাদি সাইদের আদৌ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবেন কি না, সেটি নিয়েও। পাশাপাশি মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগেরই কয়েকজন নেতাও নেপথ্যে থেকে সাইদকে ইন্ধন দিচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যেখানে দীর্ঘদিন সাইদ ছিলেন দলের বাইরে। নেতাকর্মীদের খোঁজ নেননি। দলীয় সভায়-মিছিলে যাননি, সেই সাইদ কিভাবে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন? বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না এটি প্রায় নিশ্চিত। এ কারণে বর্তমান মেয়র লিটনকে ঘিরে এই মূহুর্তে ভোটের যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, সেখানে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও সুবিধা নিতেই মেয়র পদে অংশ নিতে পারেন সাইদ।’
তবে বিএনপির মহানগর সাবেক সভাপতি ও সাবকে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমাদের দলের কেউ এ নির্বাচনে অংশ নিবে না। আমাদের কোনো নেতাকর্মীও কারও পক্ষে মাঠে নামবে না।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা বলেন, ‘আমাদের সাফ কথা আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। আমাদের কোনো নেতাও এ নির্বাচনে অংশ নিবে না। আমাদের কোনো কর্মীও কারো পক্ষে মাঠে নামবে না। এমনকি কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষেও কেউ ভোট চাইতে পারবে না দলের নাম ভাঙ্গিয়ে। সেখানে বিএনপির প্রার্থী হয়ে কেউ নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছে এটা মোটেও ঠিক নয়।’
তিনি আরও বলেন, সাইদ হাসান তো আমাদের কোনো কমিটিতেই নাই। সে নির্বাচনে অংশ নিলে আমাদের কোনো যায় আসে না। সে আমাদের দলের কেউ না। তাঁর পক্ষে নির্বাচনে মাঠে নামা তো দূরের কথা, আমরা এবং আমাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোট দিতেই যাবো না। কাজেই সাইদ বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন, এটি অবান্তর।’
জানতে চাইলে বিএনপির সাবেক নেতা সাইদ হাসান বলেন, ‘এখনো তো অনেক সময় আছে, সময় হলেই সবকিছু জানতে পারবেন। তখন সবকিছু বলবো। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেউ ইন্ধন দিচ্ছে কিনা, এটিও সময় হলে আমি সবার সামনে নিয়ে আসবো। তবে এখনো কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।’
এদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘বিএনপির একজন প্রার্থীর নাম গত দুদিন ধরে শুনছি। আমরা সব প্রার্থীকেই স্বাগতম জানাই। আমরা এই মূহুর্তে লিটনের পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরী করতে পেরেছি, তাতে বিএনপি বা যে কোনো দলের প্রার্থীকেই আমরা অনায়াসেই পরাজিত করতে সক্ষম হব বলে আশা রাখি।’