২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৫:২৪:১৮ পূর্বাহ্ন
কূটনীতিকদের এসকট ভাড়া ৩শ ডলার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৫-২০২৩
কূটনীতিকদের এসকট ভাড়া ৩শ ডলার

বিদেশি কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তায় প্রস্তুত রয়েছে আনসারের বিশেষ জনবল। কূটনীতিকদের মধ্য থেকে যারা আনসার সদস্য ভাড়া নেবেন, তাদেরকে মাসে গুনতে হবে জনপ্রতি ৩শ ডলার। অপরদিকে গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ পড়বে ১ হাজার ডলার। এছাড়া গাড়ির তেল খরচও বহন করতে হবে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়।

আনসার সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এর আগেও বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন-এজিবি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে ৬ বছর নিরাপত্তায় কাজ করেছে। চাহিদামতো লোকবল সরবরাহের সক্ষমতাও আনসার সদর দপ্তরের রয়েছে। সরকার চাইলে প্রশিক্ষিত এই জনবল দিয়েই নতুন নামে নতুন ব্যাটালিয়নও প্রস্তুত করতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুগান্তরকে বলেন, বাড়তি নিরাপত্তার জন্য আমাদের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার গার্ড প্রস্তুত রয়েছে। তারা (কূটনীতিক) আগ্রহ দেখালে সুবিধা পাবেন।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত দুটি ইউনিট গঠনের। এর মধ্যে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন-এজিবি নামে একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। আরেকটি ব্যাটালিয়ন প্রক্রিয়াধীন আছে।

আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন-এজিবিতে একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ৮ জন কর্মকর্তা এবং ৪১৬ জন আনসার রয়েছেন। তাছাড়া এজিবির মতো বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত আরও ৩ হাজার জনবল রয়েছে আনসারে। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নতুন ব্যাটালিয়নের নির্দেশনা আসামাত্রই প্রশিক্ষিত সদস্যদের মধ্য থেকে বাছাই করে সদস্য নিযুক্ত করা হবে সেখানে। তবে কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। প্রয়োজনে পোশাকের পরিবর্তন আনা হতে পারে। সরকার চাইলে ওই ব্যাটালিয়নটিকেই আনসার গার্ড রেজিমেন্ট হিসাবে পৃথক ইউনিট গঠন করতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ ইফতেহার আলী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাইনি। পেলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব। সেই লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। এসকটের জন্য আনসার ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কোনো দূতাবাস আগ্রহ দেখিয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।

তবে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের পর বিশ্বের ক্ষমতাধর একাধিক দূতাবাস আনসার বাহিনীর এসকট নিতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত কোনো চাহিদার কথা জানায়নি। দূতাবাস থেকে জনবল ও সরঞ্জাম চেয়ে চিঠি পাওয়া সাপেক্ষে আনসারের জনবল ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ ৬টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা রাস্তায় চলাচলে পুলিশের যে বাড়তি এসকট সুবিধা পেতেন, ১৪ মে সরকার তা প্রত্যাহার করে নেয়। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কয়েকটি দেশের মিশনপ্রধান সড়কে ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের জন্য পুলিশের বাড়তি প্রটোকল পেতেন। পরে আরও কিছু দেশ এই সুবিধা চাওয়া শুরু করে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় এই প্রটোকলের আর প্রয়োজন হবে না। তবে কোনো দূতাবাস চাইলে অর্থের বিনিময়ে আনসারের প্রশিক্ষিত সদস্যদের নিতে পারবে।

১৭ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কূটনীতিকদের আনসার বাহিনী কীভাবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা (এসকট) দেবে, সেটি চূড়ান্ত হয়েছে। নোট ভার্বালের (কূটনৈতিক পত্র) মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেন, কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে আনসার বাহিনী প্রস্তুত আছে।

আনসার সদর দপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, নিরাপত্তার দায়িত্ব যারা পালন করবেন, তাদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন-এজিবি ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়া এসব সদস্য দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা ভারী অস্ত্র পরিচালনা করতেও সক্ষম। এসব সদস্য মূলত ডিবির সোয়াত টিমের মতো বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

আনসার সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, চাহিদা এলে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যদের দিয়েই দায়িত্ব পালন করানো হবে। তাদের দেশে-বিদেশে কুইক রেসপন্স ট্রেনিং (কিউআরটি), স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (এসটিটি) ও স্পেশাল প্রটেকশন ট্রেনিং, বিশেষ অস্ত্র চালনার ট্রেনিংও রয়েছে।

আনসারের কর্মকর্তারা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) ও র‌্যাবে প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা সচিবালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও র‌্যাবসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে প্রেষণে কর্মরত থেকে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।

শেয়ার করুন