২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০১:৪০:৩২ অপরাহ্ন
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ ও শিল্পায়নের সম্ভাবনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১২-২০২৩
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ ও শিল্পায়নের সম্ভাবনা

এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জ্বালানি সংকট মেটানোর দিকে নজর দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়নই এর প্রধান লক্ষ্য বলে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে।


বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, পায়রায় তারা ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। কেন্দ্রটি চালানো হবে এলএনজিতে। কিন্তু পায়রায় কোনও এলএনজি টার্মিনাল না থাকায় সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি কোম্পানি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানির এক বিভাগের কাজ অন্য বিভাগ করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তারা পেট্রোবাংলাকে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব দেয়। পেট্রোবাংলা এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে গত ৮ নভেম্বর একটি টার্মশিট সই করছে।


পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, পায়রায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা বেশ দুরূহ বিষয়। কারণ পায়রা পোর্টে এলএনজির জাহাজ নোঙর করার মতো ড্রাফট নেই। এলএনজির জাহাজ নোঙর করতে ১২ থেকে ১৪ মিটার ড্রাফট প্রয়োজন। কিন্তু পায়রা বন্দরে ড্রেজিংয়ের পরও ৮ থেকে ১০ মিটার ড্রাফট নেই। এজন্য পায়রায় যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে সেটি বন্দর থেকে সাগরের ভেতরে নির্মাণ করতে হবে। স্থলভাগ থেকে অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে টার্মিনালটি নির্মাণ করতে হবে। মহেশখালিতে সাগরের ৬ কিলোমিটার দূরে টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে।


তবে এটিকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করা হচ্ছে না। পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, ৫০/৬০ কিলোমিটার দূরেও হরহামেশা এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এ ধরনের লাইন নির্মাণ খুব একটা কঠিন কাজও নয়।


পেট্রেবাংলা সূত্র বলছে, পায়রা থেকে খুলনা পর্যন্ত একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। ওই পাইপলাইনটি ন্যাশনাল গ্যাস গ্রিড লাইনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এতে কখনও মহেশখালি দিয়ে গ্যাস আমদানি কঠিন হলে পায়রা দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।


সূত্র জানায়, পায়রা বন্দরের পাশে একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এছাড়া মোংলায় একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল রয়েছে। কিন্তু গ্যাস এবং বিদ্যুতের অভাবে মোংলায় কোনও শিল্পই টেকসই হতে পারছে না। পায়রাতে টার্মিনাল নির্মাণ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন শিল্প গড়ে উঠবে। এখন গ্যাস না থাকাতে ইস্পাত শিল্পের মতো ভারী শিল্পের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া গেলে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ভারী শিল্প কারখানা গড়ে তোলা যাবে। এতে করে স্থানীয় বাজারে পণ্যের সমাগম ঘটবে। যাতে করে পরিবহন ব্যয় কমবে।


পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে আমরা বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। পাওয়ার সেলের তত্ত্বাবধানে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মাস্টার প্ল্যানটি তৈরি করেছে। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি অনুমোদন করেছেন। সেখানে কোন কোন জায়গায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করলে সুবিধা হবে এবং সারা দেশের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তার ভিত্তিতে পায়রাতেও এলএনজি টার্মিনাল করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকটের সমাধান হবে। এতে করে ওই অঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।’


শেয়ার করুন