আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে প্রাথমিকভাবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ায় অতিরিক্ত ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বাজেট নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রক্ষিতে এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে।
বাজেট বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দশক আগে গ্রামের মানুষ বিকলাঙ্গ ছেলে-মেয়েকে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখত। এখন বিকলাঙ্গ ছেলে-মেয়েরা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আসায় তাদের গুরুত্ব বেড়েছে। তাদের কথা বিবেচনা করে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা আরও বাড়াতে হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের দুটি ঋণের মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তার (ইসিএফ) আওতায় বিভিন্ন শর্তের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়াতে তিন বছরের একটা রূপরেখা দিয়েছিল। এই রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্যই রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রীও তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনায় সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আগের (২০২২-২৩) অর্থবছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে; যা জিডিপির প্রায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ’বর্তমান আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পেক্ষাপট বিবেচনায় সামাজিক সুরক্ষা বলয় না বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কারণ বর্তমানের অতি মূল্যস্ফীতির ফলে এই বলয় না বাড়ালে অতিদরিদ্র ও অসহায় মানুষের পক্ষে জীবন-ধারণ দুর্বিসহ হয়ে যাবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর জন্য বরাদ্দ হতে পারে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারের ১৪১টি সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচি রয়েছে। আগামী অর্থবছরের পরিকল্পনা হচ্ছে, বয়স্ক মানুষ, বিধবা ও নিঃস্ব নারীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ইতোমধ্যে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। আর এই বাজেটের মোট আয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আয় ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে আগামী অর্থবছরে ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধে ব্যয় ১ লাখ ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে বাজেটের খসড়ায়।