২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৩৪:০১ পূর্বাহ্ন
বিলাপ থামছেই না শাকিলের মা-বাবার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৬-২০২২
বিলাপ থামছেই না শাকিলের মা-বাবার

সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত হন ফায়ার ফাইটার শাকিল তরফদার। মৃত্যুর সংবাদে শাকিলের গ্রামের বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুখদারা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। সীতাকুণ্ডে আগুনের ঘটনার পর থেকে উৎকণ্ঠায় ছিল শাকিলের পরিবার। ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত শাকিলের এক চাচার মাধ্যমে রোববার (৫ জুন) বিকেলে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয় পরিবার। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবারের সদস্যরা।

ছেলের শোকে কাতর মা জেসমিন বেগম ও বাবা সাত্তার তরফদারসহ পরিবারের সদস্যদের বিলাপ যেন থামছেই না। সংবাদ পেয়ে বাড়িতে ভিড় করছেন পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনরা। শাকিলের এমন মৃত্যুতে শোকাহত তারাও।

তিন ভাইয়ের মধ্যে শাকিল সবার ছোট। মরদেহ আনতে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছেন তার বড় ভাই মনিরুজ্জামান তরফদার। তিনি সাতক্ষীরায় একটি এনজিওতে চাকরি করেন।

মেঝো ভাই আসাদুজ্জামান তরফদার বটিয়াঘাটায় ফায়ার সার্ভিসে আউটসোর্সিংয়ের সহকারী বাবুর্চি হিসেবে চাকরি করেন। তিনি বলেন, আমিও ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করি। শনিবার (৪ জুন) বিকেল ৫টায় মায়ের সঙ্গে ফোনে সবশেষ কথা হয় শাকিলের। এরপর আর আমাদের কারও সঙ্গে কথা হয়নি। পরে দুঃসংবাদ শুনি। আমার বড় ভাই শাকিলের মরদেহ আনতে গেছেন। মরদেহ আসতে দেরি হবে। আজকেও আসবে কি না বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের পর শাকিলের বিয়ের কথা চলছিল। কিন্তু সেটি আর হলো না।

খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ছালেহ উদ্দীন বলেন, শাকিলের পরিবার সূত্রে সংবাদ পেয়েছি তিনি আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তবে অফিসিয়ালি এখনো সংবাদ আসেনি। সংবাদ পেয়ে আমরাও শোকাহত। তবে তিনি অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের।

নিয়ম অনুযায়ী শাকিলের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরবর্তী কার্যক্রম শেষ করে বাড়িতে পাঠানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শাকিলের বাবা সাত্তার তরফদার বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে কুমিরা যাওয়ার সময় শাকিল বলে, বাবা আপনাদের রেখে আমি কীভাবে থাকব। তখন বলি, আমার দোয়া সব সময় তোমার সঙ্গে থাকবে বাবা। কিন্তু কীভাবে কী হয়ে গেল।

শাকিলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদের পর শাকিলের বিয়ে করার কথা ছিল। ইচ্ছা ছিল, শাকিলের বিয়েতে বড় অনুষ্ঠান করবে। কিন্তু বিয়ের আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। রোজার ঈদে শাকিল গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শাকিল ধার্মিক ছিলেন। তিনি এবং তার পরিবারটি খুব ভালো। রোজার ঈদে গ্রামে এসেছিল শাকিল। ওর বাবা বলেছে, শাকিল বদলি হয়ে গেছিল। কোরবানির পর যশোরের কেশবপুরে যোগদানের কথা ছিল। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হয়ে গেছে। ঈদের পর বিয়ের কথা হয়। শাকিলের ইচ্ছা ছিলো বাবা-মাকে হজে পাঠানোর। সম্প্রতি শাকিলের কেশবপুরে বদলি হয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেটিও আর হলো না।

২০১৮ সালের জুনে খুলনার কমার্স কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থান ফায়ার সার্ভিসে চাকরি পান সাকিল। প্রথমে তিনি বটিয়াঘাটা ফায়ার স্টেশনে, পরে মোংলা ইপিজেডে ফায়ার স্টেশনে বদলি হন। সেখান থেকে ছয় মাস আগে তাকে চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর শুনে কুমিরা ইউনিটের সঙ্গে তিনিও ছুটে গিয়েছিলেন আগুন নেভাতে। বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের অন্য কর্মীদের সঙ্গে শাকিলও নিহত হন। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পারিবার জানতে পেরেছে।

শেয়ার করুন