রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী কাঁকনহাট পৌরসভার (বিসিআইসি) অনুমোদিত আলোচিত সার ডিলার মেসার্স জিকে টেড্রার্সের বিরুদ্ধে সার বিপণন নীতিমালা লঙ্ঘন করে ফের সার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তারা অধিক মুনাফার আশায় ক্রয় রশিদ ব্যতিত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সার পাচার করছে। সার বিপণন নীতিমালা অনুযায়ী এক এলাকার ডিলার অন্য এলাকায় সার দিতে পারবেন না। তবে সংকট দেখা দিলে উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে সার দিতে পারবেন। কৃষকেরা বলেন,সার পাচার নির্বিঘ্ন করতে রাজনৈতিক পরিচয়ের মাদকাসক্ত ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করছে। ফলে কৃষকেরা প্রকাশ্যে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১৮ জুন রোববার দুপুরে কাঁকনহাট পৌরসভার সার ডিলার মেসার্স জিকে টেড্রার্স থেকে কয়েক ভুটভুটি এমওপি (পটাশ) সার গোগ্রাম ইউনিয়নের (ইউপি) হুজরাপুর মোড়ের কীটনাশক ব্যবসায়ী মোস্তফার দোকানে নিয়ে আসে। সাধারণ কৃষকেরা যখন এক বস্তা সার পাচ্ছে না, তখন কীটনাশক ব্যবসায়ীর এক সঙ্গে এতো সার নিয়ে আশায় কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেও সার পাচার ও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশী দামে সার বিক্রির অভিযোগে মেসার্স জিকে টেড্রার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবিতে এলাকার কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সার ডিলার মেসার্স জিকে ট্রেড্রার্সের সত্ত্বাধিকারী তুহিনা আক্তার ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ কৃষকদের কাছে অবরুদ্ধ হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জননান, এদিন কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং ডিলারের কাছে জানতে চাই বরাদ্দকৃত সার দুইদিনের মধ্যে কোথায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সার ডিলার কোন উত্তর না দিয়ে কৌশলে দোকান বন্ধ করে পালানোর চেষ্টা করে। তবে বিষয়টি বুঝতে পেরে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা ডিলারকে দোকান ঘরে অবরুদ্ধ করে শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সেখানে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এদিকে খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে ডিলারের দোকান ঘরে গেলে কৃষকেরা বিক্ষোভ করতে থাকে। কৃষকের দাবির প্রেক্সিতে কৃষি কর্মকর্তা ডিলারের গুদাম ঘরে গিয়ে বরাদ্দকৃত ৩৬ টন সার দেখতে পায়। এক পর্যায়ে সারের কৃত্রিম সংকট রোধ ও নায্যমূল্য নিশ্চিতকরনের দাবিতে ডিলার ও কৃষি কর্মকর্তাকেও অবরুদ্ধ করে কৃষকরা। কিন্ত্ত রহস্যজনক কারণে কৃষি কর্মকর্তা অভিযুক্ত সার ডিলারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে রশিদের মাধ্যমে সরকার নিধ্যরিত মূল্য কৃষকদের কাছে সার বিক্রির নির্দেশ দেন।
স্থানীয় কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এই ডিলার দীর্ঘদিন ধরে সার পাচার ও কৃত্রিম সংকটের কথা রশিদ ছাড়াই বেশী দামে সার বিক্রি করছেন। এছাড়াও চাহিদার তুলনায় কম সার দেন। এসব নিয়ে অভিযোগ করেও লাভ হয় নি। কাদিপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, সারকারি দামের থেকেও বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। কিছু করার নেই। বেশি দামেও ঠিক মতো সার দেয় না। তাই আজকে তাকে আটকিয়ে রেখেছিলাম। আমরা এই দুর্নীতিবাজ ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগের দাবি করছি। স্থানীয় কৃষকরা অতিরিক্ত উপ-পরিচালকের কাছে ডিলারের বিরুদ্ধে সার কালোবাজারি করে বেশি দামে বিক্রি, সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি, কৃষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও সময় মতো সার না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেন। এছাড়াও একটি সার নিলে অন্য সার নিতে বাধ্য করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশ ও সখ্যতা করে ডিলার এসব করছে বলে কৃষকরা প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছন।