২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৭:৩৬:৫৮ অপরাহ্ন
যানবাহন চলাচল ও অর্থনীতিতে সুফল আনছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৬-২০২৩
যানবাহন চলাচল ও অর্থনীতিতে সুফল আনছে

পদ্মা সেতুতে নিয়মতান্ত্রিক যান চলাচলে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা নির্বিঘ্নে যান চলাচল করতে পারে। নির্ধারিত গতি এবং নির্দিষ্ট লেনে যান চলাচল নিশ্চিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা কর্মী। পদ্মা সেতু ব্যবহারকারী ট্রাকসহ মালবাহী যানগুলোর চলন্ত অবস্থায় ওজন পরিমাপেও সেতুর দুই প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক ওজন স্টেশন। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে পদ্মা সেতু। দেশের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। দেশের সার্বিক জিডিপি বাড়ছে। ঢাকা থেকে খুলনা, মোংলা, বরিশাল, কুয়াকাটা অর্থনৈতিক করিডর খুলে গেছে। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।


পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, গত বছরের ২৬ জুন থেকে সেতুতে যান চলাচল শুরু হলেও চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে স্থাপিত দুটি ওজন স্টেশন পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়ে বর্তমানে তা বহাল রয়েছে। সেতুতে মালামালসহ সর্বোচ্চ ২২ টনের যান চলাচলের অনুমতি রয়েছে। ওজন স্টেশনে তিনটি লেনে যানবাহন ঢুকছে। ওজন পরিমাপক এরিয়া দিয়ে ক্রস (পার) হওয়ার মুহূর্তেই যানের পরিমাপ হয়ে যায়। এতে সেতু পার হতে কোনো সময় ব্যয় হচ্ছে না। আর এখনো ওজন পরিমাপে কোনো চার্জ লাগছে না। তবে ভবিষ্যতে চার্জ নেওয়া হবে। তবে সেটা কত তা পরে নির্ধারণ করা হবে।


তিনি আরও জানান, ২২ টনের বেশি ওজনের যানগুলোকে সেতুতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। অতিরিক্ত ওজনের যানগুলো রাখার জন্য পার্কিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ওজন স্টেশনের পাশেই। পরে ইয়ার্ড থেকে অন্য যান এনে পণ্য কমিয়ে এরপর সেতু পার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। গত প্রায় ছয় মাসে বেশ ক’টি যান অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের কারণে পার্কিং ইয়ার্ডে পাঠাতে হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারেনি।


এদিকে সেতু চালুর দিনেই একটি দুর্ঘটনায় দুই জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও পরবর্তীতে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে মেনে চলার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুতে এখন দুর্ঘটনা একেবারেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল থেকে সেতুতে ট্রাফিক পুলিশ কঠোর নজরদারি করছে। ২১ এপ্রিল থেকে ২২ জুন পর্যন্ত নির্ধারিত গতির বেশি গতিতে যান চলানো এবং নির্দিষ্ট লেনের বাইরে যাওয়ার কারণে ৭৪৯টি যানে অর্থদ- করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মো.  বজলুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, ৭৪৯ মামলায় ২০ লাখ ৮২ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে ২৩ এপ্রিল থেকে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে  স্পিড গান ব্যবহার করছে।


এদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২২ জুন চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিরাপত্তা সরিয়ে নিলেও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সেই কর্মীদের তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুর নিরাপত্তার কাজে যুক্ত করেছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া সেতু শত বছর টেকসই রেখে যথাযথভাবে ব্যবহার এবং সংরক্ষণে যতœশীল বলে জানিয়েছে। সেতু সচিব মঞ্জুর হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, পদ্মা সেতুতে নির্বিঘ্নে এবং সুচারুভাবে যান চলাচলে সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।  যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। এই নেটওয়ার্ক চালু হলে ভারত, ভুটান ও নেপালে সরাসরি যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের দুয়ার খুলবে। ট্রান্স এশিয়ান নেটওয়ার্কে যখন সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপে ট্রেন যাবে, তখন পদ্মা সেতু হয়ে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে যাবে এই পথ ধরে। তবে এ জন্য বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরীর ওপর ১৭ কিলোমিটার রেল ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এটি করা গেলেই ট্রান্স এশিয়ান রেলে যুক্ত হবে পদ্মা সেতু। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ঘটবে এশিয়া ও ইউরোপে। এ ছাড়া এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।


ঢাকা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নড়াইল, ফরিদপুর, যশোর, বেনাপোল-উত্তরে চিলাহাটি হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত যাবে এই পথ। যা ইস্তাম্বুল, তেহরান, ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকা-দিল্লিকে যুক্ত করবে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত হবে দুই মহাদেশের দুই প্রান্ত। যা ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। আর ইস্তাম্বুলকে যুক্ত করবে টোকিওর সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে আমরা এটা করেছি। সিঙ্গাপুর থেকে যখন ইউরোপে ট্রেন যাবে তখন পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। অনেক মালামাল নিয়ে যাবে, সুতরাং হেভি লোডেড সেতু বানানো হয়েছে।


শেয়ার করুন