রাজশাহীর বাগমারায় একই স্থানে একই সময়ে পৃথক দুটি সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একটি সমাবেশ থেকে এমপি এনামুলকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। অপরদিকে এমপির অনুসারীদের সমাবেশ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার দুই গালে জুতা মারে তালে তালে বলে শ্লোগান দেওয়া হয়।
উপজেলা পরিষদ চত্তরে রাস্তার একপাশে শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের অনুসারীরা। আর জেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্তরে সমাবেশ করছেন এই আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী চার নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা। এসময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মাঝখানে অবস্থান নেন অর্ধশত পুলিশ সদস্য।
শনিবার দুপুরে বাগমারার ভবানীগঞ্জে এভাবেই সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের নেতাকর্মীরা। ঈদ পুনর্মিলনীর নামে দুই অংশেরই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড’ এর ব্যানারে। এমপির অনুসারীদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দীন মুহম্মদ আগা খাঁন। অন্যদিকে ‘এমপিবিরোধী’ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন একই সংগঠনের উপজেলা সভাপতি জিয়াউদ্দিন টিপু।
‘এমপিবিরোধী’ সমাবেশে জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এছাড়া এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম হোসেন এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি পিএম সফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ ও আলফোর রহমান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পিনু মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য দেন। পরিচালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এসএম মাহাবুবুর রহমান।
অন্যদিকে এমপির অনুসারীদের সমাবেশে বক্তব্য দেন ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও এমপি এনামুলের ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আরা বেবী প্রমুখ। এটি পরিচালনা করেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আজিজ লিটন।
এমপির পক্ষের এই সমাবেশে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন। আর পাশেই তাঁর বিপক্ষের সমাবেশে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
এমপির বিপক্ষের সমাবেশে মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজনের মধ্যে যিনি মনোনয়ন পাবেন, তার পক্ষে সবাই কাজ করবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এবার তাঁরা সবাই মিলে এমপি এনামুল হককে প্রতিহত করবেন বলেও ঘোষণা দেন। সমাবেশে মনোনয়নপ্রত্যাশী পিএম সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি এনামুল হক বগুড়া পলিটেকনিকে ছাত্রশিবির করতেন। জাকিরুল ইসলাম সান্টু আপনার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করায় তাঁকে বহিষ্কার করেছিলেন। এবার আবুল কালাম আজাদ প্রার্থী হবার পরে তাঁকেও বহিষ্কার করেছিলেন। বাগমারা আওয়ামী লীগ কী আপনার বাপের সম্পত্তি? আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আপনি সাবধান হয়ে যান। আপনি যেখানে যেখানে সমাবেশ ডাকবেন, সেখানে সেখানে আমরাও সমাবেশ ডাকব।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আজকে সর্বহারা-বাংলা ভাই ছাড়া এমপি এনামুল হকের সঙ্গে কেউ নাই। এমপিকে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব এবং আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হলে জিহ্বা কেটে নেব ইনশাল্লাহ। আজকে বাগমারার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। হটাও এনামুল, বাঁচাও বাগমারা। আজকে প্রতিরোধ শুরু হলো। আজ খেলা শুরু হলো। এই খেলা বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর খেলা।’ এমপির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে কঠোর সমালোচনা করে পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তিনি এখনো ভার্জিন খুঁজেন।’
এই সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সংগঠন এই পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছেন। এটি কোন রাজনৈতিক সমাবেশ হলে আমি আসতাম না। এখানে পক্ষপাতমূলক ঘটনা ঘটবে জানলে হয়তো আমি আসতাম না।’
অন্যদিকে এমপি এনামুল হকের অনুসারীদের সমাবেশে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আরা বেবী বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের হাত ধরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বাগমারার মানুষ ভুলে যাননি। আপনারা যতই ষড়যন্ত্র করেন, সেটি কখনোই সফল হবে না।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বাগমারার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে এখানে এসেছেন। তাই তিনি বিক্ষোভ মিছিল বের করার ঘোষণা দেন। এরপর তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহীদ মিনার থেকে চলে যান। মিছিল থেকে জেলার সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া হয়।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখলাম দুইপক্ষই একই স্থানে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সে জন্য সতর্ক ছিলাম। ৪০ জন পুলিশ সদস্য এবং ডিবি পুলিশের ১০ জন মিলে মোট ৫০ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এই সমাবেশ শেষ হয়েছে।’
