রাজশাহীর দুর্গাপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিচালনা করে হয়রানি ও জরিমানা বন্ধের দাবিতে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীরা। রোববার দুপুর ১টা থেকে কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ দোকানপাট ও ফার্মেসী বন্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েন ক্রেতা সাধারণ ও রোগীর স্বজনরা। অনেকেই কাঙ্খিত পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপরে সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কৃঞ্চ চন্দ্র দুর্গাপুর সদরের বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালায়। এসময় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী কাজলের দোকানে মূল্য তালিকা না থাকায় ৭ হাজার ও এক মিজানুর রহমানের সরকার ভেটেনারী ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ন ওষুধ পাওয়ায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার দুপুর ১টা থেকে দুর্গাপুর সদরে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করে রেখে আন্দোলন শুরু করে ব্যবসায়ীরা।
আন্দোলনকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে অভিযান করতে হবে। গার্মেন্টসে মূল্য তালিকা সাঁটানো না থাকার অজুহাতে দোকানদারদের জরিমানা বা হয়রানি করা যাবে না। এদিকে দোকানপাট ও ফার্মেসীর দোকান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন ক্রেতা ও রোগীর স্বজনরা। বেলা ২টার দিকে আছিয়া বেগম তার ৬ মাস বয়সী নাতির জন্য ওষুধ কিনতে এসেও পাননি।
আছিয়া বেগম বলেন, আমার নাতি ঠান্ডা জনিত রোগে ভুগছে। হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর ওষুধ কিনতে গেলে সব ওষুধের দোকান বন্ধ পাই। অনুরোধ করেও আমার নাতির জন্য ওষুধ কিনতে পারিনি।
সরকার ফার্মেসীর মালিক মিজানুর রহমান বলেন, আমার লাইসেন্স সহ সব কাগজপত্র ঠিক আছে। দোকানে যে ওষুধ মেয়াদর্ত্তীণ হয় তা বাহিরে আলাদা করে রাখা হয়। আমি বারবার অনুরোধ করেছি, আমরা মেয়াদর্ত্তীণ ওষুধ আলাদা করে রেখেছি। তারপরও আমার দোকানে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ সারা মাসেও ২০ হাজার টাকা লাভ করতে পারিনা।
বন্ধন গামের্ন্টসের মালিক সোহাগ আলী বলেন, ইদানিং বাজারে ঘনঘন ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। আমাদের দোকান তো এক দামের না। খুচরা বিক্রি করি। কীভাবে আমরা মূল্য তালিকা সাঁটাবো। দোকানপাট বন্ধ করে আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, আমাদের দাবি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের আগে আমাদের জানাতে হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অযথা হয়রানি ও জরিমানা করা যাবে না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা যেন হয়রানির শিকার না হন।
দুর্গাপুর উপজেলা কেমিষ্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, করোনাকালীন ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। বারবার এ ধরনের অভিযান ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করছে। এর সুষ্ঠ সমাধান না হলে আন্দোলন চলবে।
দুর্গাপুর বনিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব মোল্লা বলেন, আমি সভাপতি এটা কেউ মানে না। আমাকে মানতেও চায় না। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। এখন বাজারের দু’একজন ব্যবসায়ী নেতা হয়ে গেছে। কারণ আমি শুক্রবার আধাবেলা দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম। আমার কথা কেউ মানেননি। (রোববার) দু’একজন ব্যবসায়ীর ডাকে সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন তারাই নেতা। আমি কিছু জানিনা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃঞ্চ চন্দ্র বলেন, মেয়াদোত্তীর্ন ওষুধ পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানার পর যদি তারা আন্দোলন, মিছিল ও মানববন্ধন করে তাহলে আর কি বলব। আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অনিয়ম পাওয়ায় দুটি দোকানে জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে।