২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:২২:৫৭ অপরাহ্ন
ই-কমার্সে প্রতারণা: ১৫০ কোটি টাকা এখনো ফেরত পাননি গ্রাহকেরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৩
ই-কমার্সে প্রতারণা: ১৫০ কোটি টাকা এখনো ফেরত পাননি গ্রাহকেরা

হাফিজ আল আবিদ খান নামের এক গ্রাহক ২০২১ সালের আগস্টে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিফ ওয়ার্ল্ডে ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা মূল্যের বাইক কেনার ফরমাশ দিয়েছিলেন। পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের মাধ্যমে টাকাও পরিশোধ করেছিলেন। এরপর ১ বছর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি পণ্য বা টাকা পাননি। তাঁর মতো কয়েক হাজার প্রতারিত গ্রাহকের ১৫০ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এখনো পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে। গ্রাহকেরা ফেরত পেয়েছেন ৩৭৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। গ্রাহকদের অভিযোগ, গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়া হলেও এর গতি খুবই ধীর। অথচ ২০২১ সালের ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায় বলা আছে, নির্ধারিত সময়ে পণ্য না পেলে ১০ দিনের মধ্যে গ্রাহক যে মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেছেন, সেই মাধ্যমেই তা ফেরত পাবেন।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী জানান, পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ১৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু হবে।


বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে ২৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ৫৫৯ কোটি ৫২ লাখ ৭২ হাজার ৩০৪ টাকা জমা ছিল। এই টাকা গ্রাহকেরা বিভিন্ন পণ্য কিনতে পরিশোধ করেছিলেন। আটকে থাকা এই টাকা গত বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া শুরু হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই চলছে গ্রাহক যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। ফলে ৩৭৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা ফেরত দিতে কেটে গেছে দেড় বছর।


এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩০৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন কিউকমের গ্রাহকেরা। এ ছাড়া আলেশা মার্টের গ্রাহকেরা ৪০ কোটি ৬৭ লাখ, দালাল প্লাসের গ্রাহকেরা ১৮ কোটি ৪৯ লাখ এবং ইভ্যালির গ্রাহকেরা ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা পেয়েছেন। বুমবুম, আনন্দের বাজার, থলে ডট কম, ধামাকা, শ্রেষ্ঠ ডট কম, আলিফ ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ ডিল, সফেটিক, ৯৯ গ্লোবাল, আদিয়ান মার্ট ও সাজগোজ ডটকমের টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ চলছে।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পেমেন্ট গেটওয়েতে যে টাকা আটকে আছে, তার পুরোটাই গ্রাহকদের পাওনা নয়। কিছু পেমেন্টের বিনিময়ে গ্রাহককে পণ্য ডেলিভারিও দিয়েছিল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পেমেন্ট গেটওয়ে এবং তাদের সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ হয়ে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহের পরও কিছু টাকা প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝে পায়নি। তাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে গ্রাহকদের তালিকা নিয়ে ডেলিভারির বিষয়টি যাচাই করে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়া হচ্ছে। যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সব তথ্য দিয়েছে, তাদের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।


২০২১ সালের ৪ জুলাই জারি হওয়া ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অগ্রিম অর্থ নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে যে মাধ্যমে গ্রাহক পেমেন্ট করেছেন, সেই মাধ্যমে তা ফেরত পাবেন।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ ই-কমার্স কনজ্যুমারস সোসাইটির সভাপতি বেলাল হোসাইন জুবায়ের বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, মার্চেন্ট কনফারমেশন দিক আর না দিক, যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ২৬ মের মধ্যে যোগাযোগ করবে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের এসক্রো অ্যাকাউন্টে আটকে থাকা সব টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফেরত চলে যাবে। কিন্তু আমরা এর বাস্তবায়ন দেখিনি।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের দায়িত্বে থাকা উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইনগত প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আমরা গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারিনি। নতুন করে যেন কোনো জটিলতা তৈরি না হয়, সে জন্য গ্রাহক ডেলিভারি পেয়েছেন কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে আমরা টাকা ফেরত দিচ্ছি। এ কারণেই কিছুটা সময় লাগছে।’


শেয়ার করুন