০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:০২:৫৮ অপরাহ্ন
জানুয়ারিতে সব বই নিয়ে সংশয়
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৭-২০২৩
জানুয়ারিতে সব বই নিয়ে সংশয়

চলতি বছরে প্রথম দিনে ‘বই উৎসবে’ বিনা মূল্যের পাঠ্যবইগুলো পায়নি শিক্ষার্থীরা। সব বই হাতে পেতে পেরিয়ে যায় প্রায় দেড় মাস। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। বই ছাপার দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগামী বছরের ১ জানুয়ারি সব বই পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু কার্যক্রমের ধীরগতিতে এবারও প্রথম দিনে সব বই পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।


তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেছেন, চেষ্টা চলছে প্রথম দিনেই সব বই দেওয়ার। সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দিচ্ছে। আগামী বছরের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে প্রায় ৩২ কোটি কপি পাঠ্যবই ছাপানো হবে।এসব ছাপানো ও বিতরণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।


এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী বছরের বই ছাপানোর কাজ যথাসময়ে শেষ করতে রোডম্যাপ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, আগামী আগস্টের মধ্যে বই ছাপানোর দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নানা জটিলতায় তা না হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া আগামী বছর প্রাক্-প্রাথমিক, দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান করা হবে। অথচ নবম শ্রেণির বই লেখার কাজ এখনো শেষ হয়নি। অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার দরপত্র কয়েক দিন আগে আহ্বান করা হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ হলেও তা ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যায়নি। ফলে কার্যাদেশও দেওয়া যায়নি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যায়। সেখানে পাস হলে এনসিটিবি কার্যাদেশ দেয়। এখন পর্যন্ত কোনো দরপত্র ওই কমিটিতে যায়নি। তিনি বলেন, এবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বেশি সময় নেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়ায় সময় বেশি লাগছে। যথাসময়ে সব বই না পাওয়ার শঙ্কার আরেকটি কারণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে এই নির্বাচন হলে ছাপাখানাগুলো অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই পোস্টার ছাপাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।


বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি এবং পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খানও বলেন, যে গতিতে এনসিটিবি বই ছাপার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তাতে আগামী বছরের ১ জানুয়ারিও সব বই পাবে না শিক্ষার্থীরা। কারণ, এবার একাধিক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান বেশি কাজ পাওয়ায় এনসিটিবি তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পোস্টার ছাপাতে অতিরিক্ত কাগজ লাগায় কাগজসংকটও দেখা দিতে পারে।


সূত্র বলেছে, একশ্রেণির মুদ্রণকারী এবার কাজ বাগাতে সরকারি দরের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দর দেওয়ায় বইয়ের মান নিয়েও শঙ্কা আছে। প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রথম কম দর দেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া বইগুলোর অধিকাংশ নিম্নমানের হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়।এরপরও কয়েক বছর ধরে একই কৌশলে ছাপার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।


তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী বছরের ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি সম্ভব হবে। নবম বাদে অন্যান্য শ্রেণির কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছি।’ তিনি বলেন, কম দরে কাজ পেলেও মুদ্রণকারীরা যেন নিম্নমানের কাগজে বই ছাপাতে না পারে, এ জন্য নজরদারি আরও কঠোর করা হবে।


শেয়ার করুন