ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নির্বাচনে ঋণ ও কর খেলাপের দায়ে শীর্ষস্থানীয় ২৯ ব্যবসায়ীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে সংগঠনটির নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাঁরা ঋণ ও কর খেলাপের অভিযোগের বিপরীতে অনাপত্তিপত্র দেখাতে পারবেন, এফবিসিসিআই নির্বাচন আপিল বোর্ডের পরামর্শে তাঁদের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ জন অনাপত্তিপত্র জমা দিয়ে আপিল করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও এফবিসিসিআই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন ৩১ জুলাই। এতে মোট ৮০টি পরিচালক পদের জন্য ব্যবসায়ীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩৪ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। বাকি ৪৬টি পরিচালক পদে সরাসরি ভোট হবে।
সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ নামে দুটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে প্রেসিডেন্ট পদে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমকে সবার পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই পদে আর কেউ প্রার্থী না-ও হতে পারেন। পরিচালক পদের নির্বাচন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হবে।
পরিচালক পদে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই করে ১০ জুলাই এফবিসিসিআইর নির্বাচন কমিশন ঋণ ও কর খেলাপের অভিযোগে অন্তত ২৯ জনকে অযোগ্য ঘোষণা করে। তাঁদের প্রায় সবাই দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। ঋণখেলাপির হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে সিআইবি। আর করখেলাপির হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে এনবিআরের কর বিভাগ। এই দুটি সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালক পদে যাঁদের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রেসিডেন্ট ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ভরসা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক শফিকুল ইসলাম ভরসা, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও মেট্রো নেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির, বারভিডার প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট হাবিব উল্লাহ ডন, ঢাকা চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম খান, ইন্ট্রাকো অ্যাগ্রো প্রোডাক্টের মালিক মোহাম্মদ রিয়াদ আলী, নিপ্পন ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোহাব্বত উল্লাহ, বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তাহের আহমেদ সিদ্দিকী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও খন্দকার ফ্যানের মালিক খন্দকার রুহুল আমীন, মৌলভীবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হাজি আবুল হাশেম প্রমুখ। তাঁদের কেউ ঋণখেলাপি হিসেবে, কেউ করখেলাপি হিসেবে, আবার কেউ কেউ ঋণ ও কর উভয় খেলাপি হিসেবেই অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। তবে তাঁরা দুটো সংস্থার অনাপত্তি আপিল বোর্ডে জমা দিলে প্রার্থিতা ফেরত পেতে পারেন।
এ ব্যাপারে এফবিসিসিআই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ মতিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করেছি। এতে যাঁদের খেলাপি হিসেবে প্রমাণ পেয়েছি, তাঁদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আর যাঁদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই, তাঁদের প্রার্থিতা বৈধ করে দিয়েছি। তবে যাঁদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁরা ১৫ জুলাই পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। আপিলে অনাপত্তিপত্র দেখাতে পারলে, আবারও প্রার্থিতা ফেরত পাবেন। না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা অযোগ্যই থাকছেন।’
কর খেলাপের দায়ে পরিচালক পদে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়ে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘এরা পুরোনো তথ্যের ভিত্তিতে এটা করেছে। নতুন করে তথ্য নিলে এটা হতো না। তবে আমি আপডেট করে দেব।’
মৌলভীবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হাজি আবুল হাশেম বলেন, ‘আসলে বকেয়া করের চেক দিয়েছি। এখনো তা জমা হয়নি। এ জন্য হালনাগাদ হয়নি। তাই খেলাপি দেখিয়েছে। তবে তা হালনাগাদ করে আবার জমা দেব।’
অযোগ্য ঘোষিত তালিকায় আরও আছেন খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ মনসুর, শাহাবউদ্দিন খান, নিজামুদ্দিন রাজেশ, সিরাজুল ইসলাম, রাকিবুল আলম, সালমা হোসেন অ্যাশ, জাকির হোসেন, ফয়জুর রহমান ভুঁইয়া, আবুল কাশেম খান, শামিউল হক সাফা, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, সজিব রঞ্জন দাস, হাসিনা নেওয়াজ, আলী হোসেন শিশির, মোহাম্মদ শাহজালাল, মো. আবুল হোসেন, মো. আবুল বাসার, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও কে এম আক্তারুজ্জামান।