২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৪:০৪:৩২ অপরাহ্ন
প্রধান খাদ্যশস্য চাল: উৎপাদনে উদ্বৃত্ত তবু আমদানি দ্বিগুণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৭-২০২৩
প্রধান খাদ্যশস্য চাল: উৎপাদনে উদ্বৃত্ত তবু আমদানি দ্বিগুণ

দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করতে হচ্ছে। জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ চাল আমদানি করা হয়েছে। ডলার-সংকটের এই সময়ে দেশে উৎপাদনযোগ্য এই খাদ্যশস্য আমদানির পেছনেই খরচ হয়েছে ৫১ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের বেশি (প্রায় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা)। সম্প্রতি আরও ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ঘোষণা অনেকটাই রাজনৈতিক। উৎপাদনের হিসাব বাড়িয়ে বলা হয়। চালের চাহিদা নিরূপণের ক্ষেত্রে অপচয়ের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারও কারও মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও চাল আমদানি বেড়েছে।


কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চালের হিউম্যান কনজাম্পশন (ভোগ) ছাড়াও নন-হিউম্যান কনজাম্পশন আছে। হিউম্যান কনজাম্পশন হিসাবে উদ্বৃত্ত ঠিকই আছে। তবে নন-হিউম্যান কনজাম্পশনও বাড়ছে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ চাল নন-হিউম্যান কনজাম্পশনে ব্যয় হয়ে যায়। এসব কারণে কিছু কিছু সময় একটা ব্যালেন্সিং পজিশনে আনতে এবং সিকিউরিটি স্টক রেডি রাখার জন্য সরকারকে আমদানি করতে হয়।’


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, দেশের বর্তমান জনসংখ্যার হিসাবে চালের চাহিদা বছরে ২ কোটি ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৬ টন। মাথাপিছু দৈনিক চাল খাওয়ার পরিমাণ ৩২৮ দশমিক ৯ গ্রাম ধরে এই চাহিদা নিরূপণ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছর দেশে মোট চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন। সে হিসাবে দেশে চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই থেকে মে) চাল আমদানি করা হয়েছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬ টন। এ পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।


জানা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে চাল আমদানিতে খরচ হয়েছে ৫১ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪ ডলার বা ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ধরে)।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ১৫০ টন চাল আমদানি করতে সরকারের খরচ হয় ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ৯২৬ ডলার (২ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা)।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মমতাজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত চাল আমদানি করি না। তবে বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় দ্বিগুণ আমদানির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই তথ্য আমাকে জেনে বলতে হবে। এ মুহূর্তে বলতে পারব না।’


বাংলাদেশ মূলত ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি করলেও বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি (৮ লাখ ৮২২ টন) চাল আমদানি হয়েছে ভারত থেকে।


সম্প্রতি রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির আশঙ্কায় নিজেদের মজুত বাড়াতে ভারত বাসমতী ছাড়া সব ধরনের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। ভারতের এমন সিদ্ধান্ত নিলে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি বাড়াতে হতে পারে। সম্প্রতি সরকারের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি আরও ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক সময় রাজনৈতিক কারণেও বলি, আমরা চালে উদ্বৃত্ত।সাধারণত এটা হিসাব করি, এক বছরে মাথাপিছু ১৫২ কেজি চাহিদা ধরে। এটা আসলে সঠিক নয়। এর সঙ্গে অপচয় ও অন্যান্য বিষয় যোগ করলে তা হবে ১৮২ কেজি। পশুখাদ্যে অপচয় অনেক বেড়ে গেছে। এটা অন্তত ২৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন চালের প্রয়োজন। আবার যেভাবে বলা হয়, চালের উৎপাদন ৪ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে, এটা ওভার এস্টিমেটেড। চালের যে চাহিদার কথা বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা আরও অনেক বেশি।’


বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে, এটা একটা কৌশলও হতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই খাদ্য সরবরাহে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। রাশিয়া শস্যচুক্তি স্থগিত করার পর সেটা আবারও ফিরে এসেছে। খাদ্যসংকট যাতে না হয়, সে জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’


শেয়ার করুন