২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:২৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না: শেখ হাসিনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৮-২০২৩
আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না: শেখ হাসিনা

গত সোমবার এক কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, দাবি মেনে পদত্যাগ না করলে আওয়ামী লীগ পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। ফখরুলের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পালায়নি। 


আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। 


আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেখি আমাদের বিরোধী দল থেকে... যদিও তারা সংসদে নেই, সেখানে না থাকলে তাদের বিরোধী দল বলাও হয় না। তারা বলে আমরা (আওয়ামী লীগ) পালানোর পথ পাব না, হুমকি দেয়। যিনি এ বক্তৃতাটা দেন তাঁকে স্মরণ করাতে চাই শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কোনো দিন পালায় না, পালাই নাই।’ 


বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পেরেছে? পারেনি। তারপর এরশাদ ও খালেদা জিয়া। এরাতো রীতিমতো একাত্তর সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালিয়েছে। ২১ হাজার নেতা–কর্মীকে হত্যা করেছে। 


এ সময় বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচির অর্থ জোগান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে? যত চুরি করা টাকা ছিল সেগুলো এখন বের হচ্ছে? এক এক মিটিং করতে যে টাকা খরচ করছে সেগুলো কোথা থেকে আসছে?’ 


২০০৭ সালে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমান বিদেশে পালিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসতে দেবে না। সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাকে বলে দিয়েছে আমাকে নিয়ে ঢাকায় যেন অবতরণ না করে, ঢাকায় তাদের অবতরণ করতে দেবে না। এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার পরও আমি একরকম জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।’ 


২০০৭ সালে বিদেশ থেকে শেখ হাসিনার দেশের ফেরার সময় বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা যাতে না যায় সে জন্য তৎকালীন সরকার হুমকিও দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। ওই সরকারের হুমকি উপেক্ষা করে দলীয় নেতা–কর্মীদের বিমানবন্দরে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল, বলা হয়েছিল যে মুহূর্তে নামব, সেই মুহূর্তে গুলি করে মারবে। আমি বলেছি খুব ভালো কথা, দেশের মাটিতে মরলাম, বিদেশে তো মরতে হলো না। আমাকে বলা হয়েছিল এমন জায়গায় নেওয়া হবে কেউ খোঁজ পাবে না, আমি বলেছিলাম বাংলাদেশে সেইরকম জায়গার সৃষ্টি হয় নাই।’ 


সেই সময়ের নানান ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমিতো জোর করে দেশে ফেরত এসেছি। কিন্তু যাদের নেতা পালিয়ে গেছেন। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি, গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে, মানি লন্ডারিং মামলা, যার বিরুদ্ধে আমেরিকার এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গিয়েছিল, যেটাতে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত, যার ভিসা আমেরিকা বাতিল করে দিয়েছিল। সেই সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যে দলের নেতা, তাদের মুখে বড় বড় কথা। আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। তারা তো পালিয়েই আছে। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এত লম্বা কথাটা আসে কোথা থেকে?’ 


শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, সহনশীলতা দেখাচ্ছি। কিন্তু আবার দেখলাম তারা সেই অগ্নিসন্ত্রাস। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার করেছিল যদি তার একভাগ প্রতিশোধ নিতাম তাহলে তাদের হদিসই পাওয়া যেত না। আমরা তো প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি। ঠিক আছে যার যার দল করো। আমরাতো আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতেই পারতাম না।’ 


১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের আমলে দুই দুইবার ভোট বাতিল হয়েছে, তাদের মুখে এত লম্বা কথা আসে কোথা থেকে? অবশ্যই একটা প্রবাদ আছে, ‘চোরের মায়ের বড় গলা।’ ওরা হলো সেই চোর। 

এ সময় জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। 


বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। 


শেখ হাসিনা বলেন, ‘বারবার বাধা এসেছে যাতে কোনোমতেই আওয়ামী লীগ সরকারে আসতে না পারে। সেই বাধা... ওই স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের যারা মাস্টার বা প্রভু, তারা কিন্তু সেই চক্রান্তে এখনো লিপ্ত। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জনগণ আমার মূল শক্তি।’ 


সারা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে ঢাকা শহরে বেশি। দেখা যায় ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র সব থেকে বেশি আমাদের ধনিক শ্রেণির ফ্ল্যাট-বাড়ির নিচে। সবাইকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।’ 


কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।


শেয়ার করুন