শুরু হলো শোকের মাস আগস্ট। শোকাবহ মাসটি ঘিরে মাসব্যাপী কর্মসূচির আয়োজনও শুরু হয়েছে। এদিন থেকেই আগস্টজুড়ে বাঙালি জাতি স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীনতার স্থপতি মহান এই নেতার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। একই সঙ্গে ঘৃণা ও ধিক্কার জানাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকারী একাত্তরের পরাজিত ঘৃণিত শত্রুদের। তবে বঙ্গবন্ধুর খুনি পলাতক পাঁচজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করার দাবি সবার।
বরাবরের মতো এবারও আগস্টের প্রথম প্রহর সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোর মিছিল, শপথ গ্রহণ ও জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে বিভিন্ন দল। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনাও ঘটে প্রথম প্রহরে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিল করেছে। সংগঠনের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে মিছিলে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ ও সংলগ্ন এলাকা নেতাকর্মীর স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। একই সময়ে যুবলীগ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন, ছাত্রলীগ আলোক প্রজ্বালন এবং মৎস্যজীবী লীগ মোমবাতি প্রজ্বালন ও খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে।
বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত শোকাবহ একটি মাস হচ্ছে আগস্ট। এই মাসেই জাতির ইতিহাসের চরমতম শোকবিধুর ও কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেদিন হাজার বছরের ইতিহাসের এই মহানায়কের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শ্যামল বাংলার মাটি।
একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের কূট ষড়যন্ত্র আর হামলার শিকার হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং চেতনাও। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে এর বিচারের পথ রুদ্ধ করে আরেক কলঙ্কিত ইতিহাস রচনা করা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর কলঙ্কিত সেই অধ্যাদেশ বাতিল ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও নানা কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচ ঘাতক সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়। পরে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল মধ্যরাতে দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গ্রেপ্তার হওয়া বঙ্গবন্ধুর আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় একই কারাগারে। তবে পুরো জাতি এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি পাঁচ পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের সেই ক্ষণের
বিভিন্ন দল ও সংগঠন শোকের মাসের প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার দেশজুড়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সারাদেশের মানুষ বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করবে। রয়েছে শোক র্যালি, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি ও বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
কৃষক লীগ আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বেচ্ছায় রক্তদান, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। যুব মহিলা লীগ বেলা ১১টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে বঙ্গবন্ধু স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।