ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না ছেলে-বুড়ো কেউই। মৌসুম শুরুর আগেই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এডিস মশাবাহিত এই রোগ। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দিনে দিনে বাড়ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশ শিশু। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।t
ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না ছেলে-বুড়ো কেউই। মৌসুম শুরুর আগেই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এডিস মশাবাহিত এই রোগ। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দিনে দিনে বাড়ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশ শিশু। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোর মতো বেসরকারিতেও দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। কোনো হাসপাতালে একেবারেই শয্যা মিলছে না, কোনোটিতে আবার রোগীকে জরুরি বিভাগে রেখে শয্যা খালি হলে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার হারও বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০ গুণ। অতিরিক্ত এই চাপে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ডেঙ্গু আক্রান্ত বৃদ্ধ মাকে নিয়ে গতকাল সকাল থেকে মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকার পাঁচ হাসপাতালে ঘুরেছেন বেসরকারি টেলিকম প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ। কোথাও শয্যা ফাঁকা পাননি। দুপুরে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের লবিতে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। শাকিল বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে শয্যা পাব না জানা ছিল। কিন্তু বেসরকারিতেও শয্যা পেতে এতগুলো হাসপাতাল ঘুরতে হবে ভাবিনি।’
একই বক্তব্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লায়লা জামানের। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে অপেক্ষায় থাকতে বলেছে। শয্যা খালি হলে জানানো হবে।
এদিকে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য আসা রোগীদের চাপ অন্তত ১০ গুণ বেড়ে গেছে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিল পরিশোধ, রক্তের নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট ডেলিভারি কাউন্টারগুলোয় লেগে আছে অস্বাভাবিক ভিড়।
গতকাল ধানমন্ডির কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিদিন এক শর বেশি রোগী রক্ত পরীক্ষার জন্য আসছে। স্বাভাবিক সময়ে ১০ জনও আসত না। প্রতিদিন আমাদের দেড় শর মতো ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট লাগছে। রোগীর চাপ অন্তত ১০ গুণ বেড়েছে।’
একই পরিস্থিতি ল্যাবএইড, আনোয়ার খান মডার্ন ও পপুলার হাসপাতালেও।
ব্যয় বেড়েছে চিকিৎসার
সরকারি হাসপাতালে শয্যা না পাওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়েই বেসরকারিতে ভর্তি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ মেটাতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার জানান, তাঁর স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রতিদিন তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএসওয়ানসহ তিন ধরনের পরীক্ষার প্যাকেজ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া রোগীর চাপ বাড়ায় কিছু ক্ষেত্রে রক্তের নমুনা দিতে এবং রিপোর্ট পেতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
আরও ১০ জনের মৃত্যু
এদিকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ৫৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৩১ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৪৫৩ জন। এ সময় রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ২৬১ জন মারা গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।