২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০২:০৯:০৮ অপরাহ্ন
কারও সুরক্ষারই ব্যবস্থা নেই, তবু এগোয় না
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৮-২০২৩
কারও সুরক্ষারই ব্যবস্থা নেই, তবু এগোয় না

মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি জনগণের অধিকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক কর্মীর জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিও দীর্ঘদিনের। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ২০২৩-এর খসড়ায় কোনো অধিকার বা দাবিরই যথাযথ প্রতিফলন নেই। তা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত আইনের পরিমার্জিত খসড়া প্রণয়নের জন্য গত ২৭ জুলাই যে সভা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৬ জুলাই সভাটি স্থগিত করে নোটিশ দিয়েছে।


মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব উম্মে হাবিবার সই করা ওই নোটিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০২৩-এর খসড়ার ওপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয়’ কমিটির তৃতীয় সভার সুপারিশের আলোকে পরিমার্জিত খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে ২৭-০৭-২০২৩ তারিখ দুপুর ১২টায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সভাটি অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে।


খসড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সামান্য অংশ নিবন্ধিত অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার আওতায় সেবা নেন। অধিকাংশ মানুষ এখনো নিয়ন্ত্রণহীন, নিবন্ধনহীন হাতুড়ে চিকিৎসা, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ঝাড়ফুঁকনির্ভর। অথচ জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি সামগ্রিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনা ছিল প্রত্যাশিত, যা খসড়ায় আইনে বিবেচিত হয়নি। 


খসড়া প্রস্তাবের কোনো ধারায়ই একজন প্রান্তিক মানুষের হাসপাতাল শয্যাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়নি। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা, ওষুধ, সঠিক পথ্যেরও নেই কোনো নির্দেশনা। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, দুর্ঘটনা, দুর্যোগকালে, ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কালে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির কোনো সুরক্ষাও বিবৃত হয়নি। বিশেষায়িত সেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার্ড রোগীর চিকিৎসা ও সেবাপ্রাপ্তির সুরক্ষাও নেই কোনো ধারায়। নেই মেডিকেল পর্যবেক্ষণের সুবিধাসহ তার পরিবহন সুরক্ষার ব্যবস্থা। ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার একটি শব্দও নেই প্রস্তাবিত খসড়ায়। স্মার্ট স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পেপারলেস ডাটা সংরক্ষণ, আর্কাইভ, টেলিমেডিসিন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবাকে এক অকল্পনীয় উচ্চমাত্রায় নিতে পারে, এসব বিষয় চরমভাবে উপেক্ষিত। 


টিস্যু সংরক্ষণ, জেনেটিক উপকরণ সংরক্ষণ, পারসোনাল ডাটা সংরক্ষণ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলোও খসড়ায় আসেনি। খসড়ায় অটিস্টিক, প্রতিবন্ধী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর চিকিৎসা ও সামাজিকীকরণের কোনো প্রত্যাশা বা দায়বদ্ধতার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পৃথক্‌করণ ও স্তরবিন্যাসের কোনো প্রক্রিয়া বিবেচনায় না নিয়েই ঢালাওভাবে অবশ্যপালনীয় শর্তের উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়ায় ফলোআপ সুচিকিৎসার একটি অন্যতম অংশ, রোগীর ফলোআপ-সংক্রান্ত বিষয়েও নির্দেশনা নেই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের আবাসন, জরুরি ক্ষেত্রে পরিবহনের উল্লেখ নেই, অথচ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই দুই অপরিহার্যতা উপেক্ষার সুযোগ নেই।


চিকিৎসা সেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বিএমডিসিকে কোনো ক্ষমতাই দেওয়া হয়নি। অথচ চিকিৎসা-সংক্রান্ত অভিযোগ বিশেষায়িত এক ধরনের ইস্যু, যা প্রযুক্তির উন্নয়নে আরও জটিল হবে। ফলে প্রচলিত আদালতে এই ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হবে।


নতুন আইনে চিকিৎসকদের গাফিলতি, অসদাচারণ, ত্রুটি-বিচ্যুতিকে অজ্ঞানতা, অসম্পূর্ণ চিকিৎসাজ্ঞান, ইচ্ছা-অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি, অমিশন, কমিশন, অবহেলা ইত্যাদি বিভিন্ন স্তর বিন্যাস করে অপরাধের ও শাস্তির ধরন নির্ধারণ করতে হবে।  


এ প্রসঙ্গে এফডিআরএসের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই খসড়া প্রস্তাবে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী, রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার কোনো দায় নির্ধারিত হয়নি। সামগ্রিকভাবে প্রস্তাবিত খসড়ায় সেবাগ্রহীতা বা সেবা প্রদানকারী কারোরই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। তিনি আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী গ্রুপ, সংশ্লিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে নতুনভাবে খসড়া প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নয়তো প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে যেকোনো পদক্ষেপ চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিতে পারে। 


শেয়ার করুন