চার বছর তিন মাস আগে ২০১৯ সালের ৯ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪১তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য শূন্য পদের অধিযাচন পাঠায় সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি)। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ২ হাজার ১৬৬টি পদের বিপরীতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে পিএসসি। কিন্তু চার বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো বিসিএসের ফল প্রকাশে এমন দীর্ঘসূত্রতা শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা বিশ্বে রেকর্ড হিসেবে গণ্য হতে পারে।
চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তথ্য যাচাই-বাছাই, গেজেট প্রকাশ, যোগদান—এসব ধরলে এই বিসিএসে নিয়োগ পেতে শেষ পর্যন্ত কত সময় লাগবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলের অপেক্ষায় থাকা ১৩ হাজার প্রার্থী।
কেবল ৪১ বিসিএস নয়, ৪৩, ৪৪ ও ৪৫—এই চার বিসিএস নিয়ে এখন বিসিএস-জটে আক্রান্ত পিএসসি। এর মধ্যে ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল বাকি।
৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা এ বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়ার কথা। অন্যদিকে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের নিয়োগও ঝুলে আছে।
২০২১ সালে চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ ৪২তম বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা ছিল না। শুধু মৌখিক পরীক্ষা দিয়েই নিয়োগ হয়েছে। এই বিসিএস বাদ দিলে পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে শুরু হওয়া একটি বিসিএসও পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয়নি।
অথচ পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যোগ দেওয়ার পরপরই বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যেই একটা বিসিএসে নিয়োগ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য তিনি রোডম্যাপ করার কথাও বলেছিলেন। অথচ এক বছরে নিয়োগ শেষ করা তো পরের কথা, লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতেই এক বছরের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা লাখো চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা সেই অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। প্রশ্ন উঠেছে পিএসসির সক্ষমতা নিয়েও।
সামাজিক নিরাপত্তা, ভালো বেতনকাঠামো এবং গত এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে লাখো তরুণের। ফলে দেখা যাচ্ছে, একেকটি বিসিএসে এখন ৪ থেকে ৫ লাখ তরুণ অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা নেওয়া, এর ফল প্রকাশ করে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া, এরপর চূড়ান্ত ফল, পুলিশ যাচাই, যোগদান—এসব মিলিয়ে তিন থেকে চার বছরেরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে একটা বিসিএসের পেছনেই চার বছর চলে যাচ্ছে তারুণ্যের।
চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, চার বছরে পৃথিবীর বহু দেশে এক সরকার ক্ষমতা শেষ করে আরেক মেয়াদ আসে। চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক শেষ করা যায়। কিন্তু চার বছরেও একটা বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারছে না পিএসসি।
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন সাবেক শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন। তিনি যোগ দেওয়ার পর ২০২১ সালের ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয় পিএসসি। কম্পিউটার পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা না থাকলেও পাঁচ মাস লেগে যায়। ২০২১ সালের ১ আগস্ট এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয় ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে। শেষ হয় পরের বছরের ১২ জানুয়ারি। ১৮ হাজার ৮৭০ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষা দেন। প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। কোনো বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশে এটি একটি রেকর্ড।
২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৯ জন প্রার্থী। গত বছরের জুলাই মাসে লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও লিখিত পরীক্ষার ফল হয়নি।
৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে জানুয়ারিতে। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ফল প্রকাশ হয়নি। অন্যদিকে অক্টোবর থেকে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। দেখা যাচ্ছে, বারবার পিএসসি লিখিত পরীক্ষার পর হোঁচট খাচ্ছে।
পিএসসির দাবি, ৪১তম বিসিএসে ৩১৮ জন পরীক্ষক ভুল করেছিলেন। তাতে ১৫ হাজার খাতায় গরমিল দেখা দেয়। এ কারণে খাতা আবার তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যায় এবং ফল প্রকাশ পিছিয়ে যায়। প্রশ্ন হলো, পরীক্ষকের অবহেলার দায় কেন পরীক্ষার্থীরা নেবেন? আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সমস্যার সমাধান হবে?
সমাধান যে হয়নি, তার প্রমাণ মেলে পরের বিসিএসগুলোতেও। কারণ পরের বিসিএসগুলোতেও একই সমস্যা হচ্ছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কারণ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দুজন কাটেন। যে পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করা হয়, তাতে প্রথম পরীক্ষক ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের দেখা খাতায় ২০ নম্বর বা অধিক নম্বরের পার্থক্য থেকে যায়। আর তখন খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠাতে হয়।
সমস্যার সমাধানে পিএসসি পরীক্ষক ও নিরীক্ষকদের কমিশনে ডেকে কয়েক দিনে টানা লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে পারে। আবার এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। কোনো একটা সুনির্দিষ্ট উপায় ছাড়া লিখিত পরীক্ষার এই জট কাটানো সম্ভব নয়।
অন্যদিকে ৪০তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নন-ক্যাডারে নিয়োগ দিতে পারেনি পিএসসি। সাধারণত, পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আগের বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিত পিএসসি। কিন্তু এবার এখনো নন-ক্যাডারের কোনো তালিকাই দিতে পারেনি পিএসসি।
নন-ক্যাডারে নিয়োগ বাড়াতে হবে: সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা বাড়ার পাশাপাশি নিয়োগে স্বচ্ছতা থাকে বলে চাকরিপ্রার্থীদের বিসিএস নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। একেকটা বিসিএস পরীক্ষায় এখন ৪ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন,সাধারণভাবে গড়ে ২ হাজার ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও বিপুলসংখ্যক প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হতেন।
উত্তীর্ণ এই প্রার্থীদের প্রথম শ্রেণির অন্যান্য পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই ২০১০ সালে নন-ক্যাডার নিয়োগে বিশেষ বিধিমালা করার উদ্যোগ নেন সেই সময়ের চেয়ারম্যান প্রয়াত সা’দত হুসাইন। ২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণির পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণির পদেও নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর ননক্যাডারের আবেদন নেওয়া হতো এবং পরের বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগপর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যত চাহিদা আসত, সেখান থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান এই বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেন। ফলে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ আটকে যায়। এ নিয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
২০২৩ সালের জুন মাসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। এরপর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ৪০তম বিসিএসের ননক্যাডারে নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
নন-ক্যাডারে নিয়োগসহ ছয় দফা দাবিতে গত বছরের অক্টোবরে পিএসসির সামনে মানববন্ধন ও মিছিল করেছিলেন প্রার্থীরা। এখনো নন-ক্যাডার নিয়োগ না হওয়ায় তারাও হতাশ। ৪০তম নন-ক্যাডারের নিয়োগ না দিয়ে ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করলে জটিলতা হবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন প্রার্থীরা।
অবশ্য পিএসসি বলছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রথম শ্রেণির (গ্রেড-৯) সহকারী প্রকৌশলীর ১৫৬ পদে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে জটিলতা শুরু হয়েছে। চাহিদা দিলেও এলজিইডি এখন ওই প্রকৌশলীদের নিয়োগ না দিতে বলেছে।
এই জটিলতায় নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। একটি বিষয় না বললেই নয়। বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ায় দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। পিএসসির অসংখ্য পরীক্ষা নেওয়ার জটিলতাও কমেছে। এখন বিসিএস-জট তৈরি হওয়ায় এর প্রভাব যেন নন-ক্যাডারে না পড়ে, সে জন্য পিএসসির সতর্ক থাকা উচিত। আসলে নন-ক্যাডারে যত বেশিসংখ্যক পদ বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে, ততই দেশের মঙ্গল।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার জরুরি: ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হওয়া বিসিএসগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি বিসিএসেই পরীক্ষা হয়েছে এক বছর, নিয়োগ হয়েছে আরেক বছর। যতই দিন গেছে, দীর্ঘসূত্রতা বেড়েই চলেছে। ২০০৩ সালের ২৪তম বিসিএস থেকে শুরু করে গত ২০ বছরের ২২ বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত ও চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের সময়সূচি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৫তম বিসিএসে সবচেয়ে কম সময় নিয়েছিল পিএসসি। মাত্র দেড় বছরে এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল হয়েছিল। কিন্তু এখন বেশির ভাগ বিসিএস শেষ করতে গড়ে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। গেজেট প্রকাশ ও যোগদানের তারিখ ধরলে দেখা যাচ্ছে, চার বছরের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে দীর্ঘসূত্রতা বেড়েই চলছে। এই দীর্ঘসূত্রতা কমানো জরুরি।
বাংলাদেশে এত সময় লাগার একটা বড় কারণ লিখিত পরীক্ষার খাতা দেরিতে মূল্যায়ন। ১০-১৫ হাজার ছেলেমেয়ের লিখিত পরীক্ষার ফল দিতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। অথচ কয়েক লাখ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা নিয়ে তিন মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল এক বছরেও দিতে পারছে না পিএসসি। দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হলে এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে।
আবার বাংলাদেশে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল, টেকনিক্যাল আর উভয় ক্যাডার আছে। এক শিক্ষা ক্যাডারেই
অসংখ্য বিষয়। ফলে নিয়োগে সময় বেশি লাগে। এতগুলো ক্যাডার একসঙ্গে রাখার প্রয়োজন আছে কি না, ভাবতে হবে। পাশাপাশি বিসিএসে বা নিয়োগ পরীক্ষার সংস্কারের কথাও ভাবতে হবে। আবার একেকটা বিসএসে কেন এত দেরি হয়, সে জন্য পিএসসিকে জবাবদিহির আওতায় আনাটাও জরুরি।
উন্নত বিশ্বে বিসিএস বা সরকারি চাকরি নিয়ে আলাদা করে উন্মাদনা নেই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সিভিল সার্ভিস সবচেয়ে পুরোনো। ভারতের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা নেয় ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন। প্রতিবছরের জুনে তারা প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয় এবং আগস্টে ফল প্রকাশ করে। এরপর অক্টোবরে লিখিত পরীক্ষা এবং জানুয়ারিতে ফল প্রকাশিত হয়। উত্তীর্ণদের মার্চে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে মে মাসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। যাঁরা চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন, সেপ্টেম্বর থেকেই তাঁদের চাকরির মূল প্রশিক্ষণ শুরু হয়। অথচ বাংলাদেশে একেকটা বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ করতেই তারুণ্যের চার বছর বা আরও বেশি সময় শেষ হয়ে যায়। পিএসসিকে তারুণ্যের আস্থায় আনতে হলে নিয়োগে স্বচ্ছতার পাশাপাশি এই দীর্ঘসূত্রতা কমাতেই হবে।