২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:৪৭:২৩ পূর্বাহ্ন
আ.লীগের বিশেষ সভা: ঐক্য না থাকলে এবার বিজয় কঠিন হবে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৮-২০২৩
আ.লীগের বিশেষ সভা: ঐক্য না থাকলে এবার বিজয় কঠিন হবে

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করল আওয়ামী লীগ। সেই বৈঠকে দলের তৃণমূল নেতাদের বেশির ভাগের কণ্ঠে আবার সামনে এল দলের কোন্দল। এ নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, তৃণমূলে ঐক্য না থাকলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয় কঠিন হবে।


আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল রোববার দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেতাদের বক্তব্য, অভিযোগ ও অসন্তোষের কথা শোনার পর কোন্দল ভুলে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন দলের সভাপতি।


শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌর মেয়র এবং সংসদ সদস্যরা অংশ নেন।


শুরুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সূচনা বক্তব্য দেন। পরে সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়ার পরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতারা বক্তব্য দেন। দুপুরের খাবারের বিরতি পর্যন্ত ২১ জন বক্তব্য দেন। বেলা সোয়া ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সভা মুলতবি রাখা হয়। বেলা ৩টার পরে তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। ওই সময় ২২ জন বক্তব্য দেন। সর্বশেষ দলীয় সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে সভা শেষ হয়।


তৃণমূলে আওয়ামী লীগের ঐক্য না থাকলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয় কঠিন হবে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দ্বন্দ্ব আছে। এই দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে। আজকে দল দুই ভাগে বিভক্ত। একটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আরেকটা আমি লীগ।


যশোর জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা দলের সভাপতির উদ্দেশে আরও বলেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসতে পারলে তিনিও (প্রধানমন্ত্রী) থাকবেন না, শহীদুল নিজেও থাকবে না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে না পারলে ওয়ান-ইলেভেনের মতো ছেলের বয়সীদের হাতে চড় খেতে হবে। চিরতরের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এ জন্য নেত্রীর দিকে তাকিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেত্রী ও দল যাঁকে মনোনয়ন দেয়, তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে।


সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে তৃণমূলের নেতারা স্থানীয় এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন। তাঁদের অভিযোগ, নেতা-কর্মীদের পরিশ্রমে বিজয়ী হয়ে নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন এমপিরা। পছন্দের প্রার্থী না থাকলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহীদের মদদ দেন এমপিরা।


বরগুনার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার বলেন, দলের মধ্যে কোন্দলের কারণে তাঁরা অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সংসদ নির্বাচনে দলের সভাপতি যাঁকে মনোনয়ন দেন, তাঁকে নির্বাচিত করেন। কিন্তু দেখা যায় এমপি হওয়ার পরে তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না।


বৈঠকে একাধিক বক্তা অভিযোগ করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পেলে অনেক এমপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দেন। এসব ক্ষেত্রে মদদদাতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়। যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে, তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে সভায়।


সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সংযুক্ত করার দাবি ওঠে বৈঠকে। এ নিয়ে একাধিক নেতা কথা বলেন। তাঁদের কারা কারা উপকারভোগী, সেটা জানলে ভোটের প্রচারণায় সুবিধা হবে। একজন নেতা বলেন, টিআর, কাবিখা রিলিফ দলের অনুকূলে দিতে হবে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ সেটা ভাগ করে দেবে। তাহলে দল শক্তিশালী হবে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ থাকবে না।


সভা সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে ভারমুক্ত করতে দলীয় সভাপতির কাছে দাবি করেন। বক্তব্যে কানাই লাল বলেন, এম এ হাকিম হাওলাদারের মৃত্যুর পরে তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। দয়া করে তাঁকে ভারমুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান দলের সভাপতির কাছে।


জবাবে দলের সভাপতি বলেন, ভারমুক্ত করে দেওয়া হলো। আজকের বৈঠকে সবার সম্মতিতে সবাইকে ভারমুক্ত করা হলো। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকেরা ভারমুক্ত অর্থাৎ পূর্ণ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অবশ্য কোন পর্যায়ের নেতারা এর আওতায় পড়বেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি তা স্পষ্ট করে বলেননি।


সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা কোন্দলে না জড়াতে দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় যাঁকেই নমিনেশন দেওয়া হোক না কেন, তিনি ভালো-মন্দ বা কানা-খোঁড়া যা-ই হন, সবাইকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, তাঁকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে।


শেয়ার করুন