২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৪৮:০৫ অপরাহ্ন
মেঘের দেশে, ছবির দেশে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২৩
মেঘের দেশে, ছবির দেশে

বৃষ্টির পাহাড়টা একটু অন্য রকম। নিঃশব্দের পাহাড় ঢেকে যায় সাদা মেঘের আবরণে। বৃষ্টি শেষে নীল পাহাড়। বারিধারায় ঝরনা ছুটে চলে চঞ্চল বেগে। কচি পাতায় জমে থাকে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা। মেঘে ঢাকা সবুজ পথ।


এমনই এক ঘোর লাগা বর্ষায় এবার রওনা হয়েছিলাম মায়াবী ভূমির অন্য দেশ রাইক্ষ্যং লেকের পথে। খুব সকালে বৃষ্টি মাথায় যাত্রা শুরু—রুমার পথে। বান্দরবান সদর থেকে দুই-আড়াই ঘণ্টার পথ। পুরো পথেই ছিল বৃষ্টি। পথের এক পাশে নয়নাভিরাম অরণ্যভূমি, অন্যদিকে উঁচু পাহাড়শ্রেণি।


দুপুরের আগেই পৌঁছাই রুমা বাজারে। সেখানে দুপুরের খাওয়া শেষ করে আবার যাত্রা। ট্রেকিং রুটগুলোতে নিজেরা রান্না করি বলে তিন দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যও কিনে নেওয়া হলো।


রুমা থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন গাইড শাহজাহান। সেখানকার থানায় সবার নাম-ঠিকানা লিখে রিজার্ভ চাঁদের গাড়িতে রওনা হলাম বগা লেকের পথে। উঁচু-নিচু ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথ ধরে চলেছি বগা লেকের দিকে। কিছুটা বৃষ্টিও ছিল। যেখানে পথ কিছুটা উঁচু আর ভাঙা ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে যাত্রী নামিয়ে গাড়ি একলা চলে, আমরা হেঁটে। বৃষ্টির দিনে পথ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ থাকে বলে ছয় কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছাতে হবে বগা লেক। কাঁধে ব্যাগ, পায়ে বুট আর হাতে ট্রেকিং স্টিক বা লাঠি। এই নিয়ে হাঁটা শুরু। হাঁটতে হাঁটতেই ঝুপ করে রাত নেমে আসে নিঝুম পাহাড়ের দেশে। রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো সিয়াম দিদির কটেজে।


রাতের খাওয়া শেষ করে লেকের পাড়ে বিশ্রামের আয়োজন। বিশাল আকাশের অগণিত নক্ষত্রের নিচে জেগে থাকি আমরা অভিযাত্রীর দল।


খুব সকালে আবার যাত্রা শুরু। গন্তব্য রাইক্ষ্যং লেক। বর্ষায় পাহাড়ের পথ পুরোটা বৃষ্টিমুখর এবং জোঁকে ঠাসা। পথের ঝুঁকি কিছুটা বাড়িয়ে দেয় ঝুম বৃষ্টি। বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টিতে হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে যায়। এর মধ্যে দল বেঁধে হেঁটে চলেছে অভিযাত্রীরা। হারমনপাড়ায় প্রথম বিরতি। পাহাড়ের চূড়ার এই পাড়ায় ছুটে আসে মেঘ। এ যেন মেঘের দেশ, ছবির দেশ। বৃষ্টির মধ্যে আবার রওনা হলাম। পাহাড় বেয়ে উঠতে হলো সাইকতপাড়ায়। অঝোর বৃষ্টিতে পাড়ার ঘরগুলোও স্পষ্ট দেখা যায় না। এখানকার একটি মাঠ পেরিয়ে চায়ের ছোট্ট দোকান। বৃষ্টিতে ভেজা ঠান্ডা হয়ে আসা পথিকের জন্য এক কাপ চা খুবই কাঙ্ক্ষিত। গরম চায়ে নিজেদের উষ্ণ করলাম। চায়ের কাপে যেন মেঘ মিশে যায়! এবার নামতে হবে।


উঁচু পাহাড় থেকে নিচের পৃথিবী দেখলাম এক পলক। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা পথ মনে হয়, সবুজের মখমলে সর্পিল রেখা। নামার পথটা কাদায় ভরপুর, যেন হাঁটাও দায়।


জুমের পথ শেষ করে পৌঁছাই প্রধান রাস্তায়, যেটা শেষ হয় আনন্দপাড়ায়। তারপর বিশ্রাম পাহাড়-মেঘের এই দেশে। জুমের ভুট্টা, ব্যাগে বহন করা শুকনা খাবার আর চা—এই ছিল দুপুরের আহার।


এবার নামতে পথ হলো দীর্ঘ। এই পথ মিশেছে রুমা খালে। পাশের এনাউপাড়ায় যখন পৌঁছাই, তখন প্রায় দিনের শেষ। মুরংদের বসবাস এখানে। রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো কার্বারির বাসায়। বেশ বড় ঘর, পরিষ্কার মাচা, চারপাশে খোলা জানালায় খুব সহজে দেখা যায় কাছের পাহাড়ে জমাট বাঁধা মেঘ।


সন্ধ্যার পরপরই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। রাতে পাহাড়জুড়ে নামে অঝোর বৃষ্টি। তারপর মেঘহীন আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ পাহাড়ের চূড়ায় ঝুলে থাকে। জোছনায় আলোকিত সবুজ পাহাড়ঘেরা এই পাড়া।


পরদিন সকালে ঘুম ভাঙে বৃষ্টি আর নদীর কলকল শব্দে। বৃষ্টি আর মেঘের অরণ্যের পথে পথিক এবার। কখনো কোমর আবার কখনোবা বুকসমান পানিতে পাড়ি দিলাম রুমা খাল। এরপর অনেকটুকু পথ হেঁটে উঠতে হয় জুমের রাস্তা ধরে।


শেয়ার করুন