১ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ১১ তরুণী এ সেবা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা সাধারণ যাত্রীদের কাছে ‘ট্রেনবালা’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। যাত্রীবান্ধব অভিজ্ঞতার সঙ্গে বিনয়ী, ভদ্রতায়ও তারা এগিয়ে আছেন। এক কথায় বলা যায়, বিমানের মতো ট্রেনেও এখন সেবা মিলছে ট্রেনবালার।
খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তারাই বলছেন, এসব ট্রেনবালা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে রাত-দিন ট্রেনে যাত্রীদের সেবায় দায়িত্ব পালন করছেন। বিনা টিকিটে যাত্রী তোলা বা অন্য কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় তাদের সেবায় যাত্রীদের সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষও বেশ আনন্দিত।
রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে বলেন, আমরা রেলে যাত্রীদের শতভাগ সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। নারী-শিশুসহ যাত্রীসেবা উন্নয়নে নারী সেবিকারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষ, চটপটে, স্মার্ট—এসব নারী সাধারণ যাত্রীদের কাছে ‘ট্রেনবালা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। শুধু কক্সবাজার রুটে নয়, বিরতিহীন সব কটি ট্রেনেই এ সেবা নিশ্চিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নারীর উন্নয়নে বিশ্বাসী। রেলে ট্রেনচালক-গার্ডসহ বিভিন্ন পদে নারীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। গত দুদিন কক্সবাজার এক্সপ্রেসে কর্মরত অন্তত ৭ জনের সঙ্গে কথা বলেন যুগান্তর প্রতিবেদক। একই সঙ্গে সাধারণ ট্রেনযাত্রীরাও বলেছেন— ট্রেনে যাত্রীসেবায় নারীদের আন্তরিক আতিথেয়তা প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
বিশেষ করে ট্রেনের নারী শিশু যাত্রীরা খুবই আনন্দিত। মাস্টার্স শেষ করে এ পেশায় আসা তরুণী ফারিয়া বিনতে হোসেন বললেন, ট্রেন যাত্রীসেবায় এমন উদ্যোগ আমাদেরও সম্মানিত করছে। যাত্রীরা আমাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করছেন। চলন্ত ট্রেনে সেবার কাজ নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ফলে সেবা নিশ্চিত করছি আনন্দসহকারে।
শনিবার কমলাপুর স্টেশন ৩ নম্বর প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে থাকা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি এসি বগির দরজায় দাঁড়িয়েছিলেন ‘ট্রেনবালা’ জান্নাত আক্তার। যেসব যাত্রী ওই দরজা ধরে ট্রেনে উঠছিলেন, সবাইকে তিনি আন্তরিকতার হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন। নারী শিশুদের হাত ধরে ট্রেনে উঠতে সহযোগিতা করছিলেন। এক একটি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এসব তরুণীর পরনে ছিল আকাশি রঙের শার্ট, নেভি ব্লু স্যুট-প্যান্টের সঙ্গে মানানসই টাই ও জুতো। সত্তর বছরের এক নারী যাত্রীকে প্ল্যাটফরম থেকে জড়িয়ে ধরে ট্রেনে উঠছিলেন সাদিয়া আক্তার। ওই বৃদ্ধা যাত্রীকে ট্রেনের সিট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে-নির্ধারিত সিটেও তাকে বসিয়ে দেন সাদিয়া।
সাদিয়া বলেন, খুব ভালো লাগছে। সাধারণ যাত্রীরা সম্মান দেখাচ্ছেন। আমরা সবাইকে স্যার বলে সম্বোধন করছি। উত্তরে কেউ কেউ আমাদেরও ম্যাডাম বলছেন। যাত্রীদের এমন ব্যবহারে আমরাও উৎসাহ-সাহস পাচ্ছি।
নাদিয়া সুলতানাসহ আরও অন্তত ৪ জন ট্রেনবালা জানালেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাত্রীদের তারা সেবা দিচ্ছেন। রাতের ট্রেনেও তারা সেবা নিশ্চিত করছেন।
কক্সবাজার থেকে আসা যাত্রী জাকির হোসেন বললেন, তার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন মেয়ে কমলাপুর স্টেশনে নামেন। ট্রেনে ওঠানামা ও ভেতরে ট্রেনবালারা যে সেবা দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সিনথীয়া জাকির (১৮) বলেন, এসব তরুণী খুবই স্মার্ট। বিনয়ের সঙ্গে কথা বলেন, অনেক নারী যাত্রীর টয়লেটে যেতেও সহযোগিতা করছিলেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে অনবোর্ড ক্যাটারিং সার্ভিস প্রোভাইডার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এসএ করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, যাত্রীসেবায় সরকারের এমন উদ্যোগ সাধারণ যাত্রীদের আনন্দিত করছে।
এসএ করপোরেশনের মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে এসব তরুণী রেলে সেবা দিচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই রেলে সাধারণ যাত্রীরা সর্বোচ্চ সেবায় ভ্রমণ করুক।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ট্রেনে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া এসব নারীর পদবি স্টুয়ার্ড। তবে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরা তাদের ট্রেনবালা বলেই ডাকছেন। তরুণীদের পোশাক থেকে শুরু করে ব্যবহার-সেবার ধরন সবই বিমানবালার মতো। আমরা বিমানবালার মতো তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলেছি।
রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বলেন, সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে যে সারা মিলছে, আমরা খুবই আনন্দিত। তরুণীরাও সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন। বিরতিহীন সব ট্রেনেই ‘ট্রেনবালা’ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে যাত্রী পরিসেবায় নারীরা ভালো কাজ করবেন।