২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:৫৩:২৮ অপরাহ্ন
প্রধান ইমারত পরিদর্শক ইমরানের ক্ষমতার দাপট!
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
প্রধান ইমারত পরিদর্শক ইমরানের ক্ষমতার দাপট!

সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, একই জায়গায় ৩ বছরের বেশি দায়িত্ব পালনের বিধান না থাকলেও রাজউক জোন ৬/১ এর প্রধান ইমারত পরিদর্শক ইমরান হোসেন প্রায় ৬ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভবনের ছাড়পত্র ও নকশা পাইয়ে দিয়ে তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের সদস্যরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ইমরানের ক্ষমতার দাপটে রাজউকের কর্মকর্তাও অবাক!


রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে ইমরান রাজউক জোন ৬/১ এ যোগ দেন। যোগদানের পর থেকে তিনি বিভিন্ন জনকে ব্যবহার করে রাজউকে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- কয়েকজন পরিদর্শক, সার্ভেয়ার, রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী একাধিক ব্যক্তি। এমনকি একই জোনের অথরাইজড অফিসার জোটন দেবনাথও সিন্ডিকেটের সদস্য। 


রাজউকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, নিয়মবহির্ভূত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে ঢাকার কিছু এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে ভবনের ছাড়পত্র ও নকশা পাইয়ে দিয়েও তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।


জানা গেছে, ছাড়পত্র বা নকশার জন্য আবেদন করার পর এবং ড্যাব বা অন্য কোনো ঝামেলা হলে ইমরানের কাছে গ্রাহকদের নিয়ে যান সিন্ডিকেটের সদস্যরা। নকশা পাইয়ে দিতে, ঘুস লেনদেন ও দু-একটি কাগজপত্র জালিয়াতিতে সহায়তা করতে ইমরান বেনামে এনেক্স ভবনের পেছনে নিজস্ব অফিস গড়ে তুলেছেন। অনুসন্ধানে বিষয়টি উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে খিলগাঁও, বাসাবো, মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী, আরকে মিশন রোডের আশপাশসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ইমরান। অন্যসব প্রধান ইমারত পরিদর্শকের চেয়ে তার এলাকা কয়েকগুণ বেশি। এমনকি পুরো রাজউক জোনে বিভিন্ন অনৈতিক দাবি তিনি অর্থের বিনিময়ে পূরণ করেন। সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য জোটনের সঙ্গে যোগসাজশে ইমরান লাখ লাখ টাকা কামিয়ে আসছেন। 


বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঘুসের টাকার ভাগ ইমরান বিভিন্ন মহলে দিয়ে থাকেন। এ কারণে বছরের পর বছর রাজউক জোন ৬/১ এ তিনি বীরদর্পে বিধিমালার তোয়াক্কা না করে দায়িত্ব পালন করছেন। সব সময় ১০-১৫ জন ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তিনি অফিস ও রাজউকে চলাচল করেন। সরেজমিন এর সত্যতা পাওয়া যায়। এতদিন প্রধান ইমারত পরিদর্শক হিসাবে ইমরান অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকলেও সম্প্রতি প্রমোশনের মাধ্যমে তাকে প্রধান ইমারত পরিদর্শক হিসেবে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। প্রমোশনের পরও তাকে বদলি না করায় রাজউকের কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। রাজউকের একজন প্রধান ইমারত পরিদর্শক যুগান্তরকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রমোশনের পরদিনই ইমরানকে বদলি করার কথা। কিন্তু ইমরানের বেলায় এমন ব্যতিক্রম ঘটনা আমাদের বিস্মিত করেছে। 


প্রায় ৬ বছরের কাছাকাছি সময় কেউ একই জায়গায় কর্মরত থাকতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নে রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রভাবশালী হওয়ায় এমনটি হয়েছে। রাজউক জোন-৫/১ এ ইমরানকে বদলি করা হলেও আবার তাকে রাজউক জোন-৬ এ অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে কর্মকর্তাদের মাঝে। এমন ঘটনায় রাজউক কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইমরানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছেন না। তারা জানান, রাজউকে ইমরানের শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী সক্রিয়। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়। 


রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজউক জোন-৫ পুরান ঢাকার এলাকা, আর জোন-৬ ডেমরা এলাকা। ঢাকার দুই মেরুর দুটি এলাকায় ইমরান কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন? দুটি জোনে আলাদাভাবে অথরাইজড অফিসার রয়েছেন- দুজন অথরাইজ অফিসারের অধীনে ইমরান কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন? এছাড়া এমন দায়িত্ব বিধিসম্মত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। 


সব অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরান হোসেন বলেন, তার কোনো ব্যক্তিগত অফিস নেই।


শেয়ার করুন