২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১০:১৪:১২ পূর্বাহ্ন
সেনাবাহিনীতে ভর্তি থেকে বাঁচতে ১০ লাখ টাকারও বেশি ঘুষ দিচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৩
সেনাবাহিনীতে ভর্তি থেকে বাঁচতে ১০ লাখ টাকারও বেশি ঘুষ দিচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে সৈন্য সংকটে ভুগছে ইউক্রেন। তাই দেশটির সক্ষম যুব সমাজকে আইন করেই অনেকটা সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু বাধ্যতামূলক এই নিয়োগ এড়াতে ঘুষ পর্যন্ত দিচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা। অনেকে প্রায় ১০ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ টাকারও বেশি পর্যন্ত ঘুষ দিচ্ছেন। এমনটাই উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে।


সেনাবাহিনীতে নিয়োগে দুর্নীতি রোধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমনকি তিনি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের কার্যক্রম পরিচালনা করা আঞ্চলিক প্রধানদের বরখাস্ত পর্যন্ত করেছেন।


দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেন বিপুল পরিমাণ সেনা হারিয়েছে। এই অবস্থায় সেনাবাহিনীতে লোকবল বাড়াতে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন জেলেনস্কি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকেই দেশে মার্শাল ল জারির সময় এই নির্দেশ দেন জেলেনস্কি। কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। কারণ, অনেকে টাকার বিনিময়ে শারীরিকভাবে অযোগ্য হওয়ার সনদ কিনে সেগুলো নিয়োগ বোর্ডে জমা দিয়ে পার পেয়ে গেছেন। অবশ্য এ কাজে গড়ে ৬ হাজার ডলার পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।


আবার অনেক ইউক্রেনীয় পুরুষ অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করেছেন। অনেকে সফল হয়েছেন আবার অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায় ১৩ হাজার জন সীমান্তরক্ষীদের কাছে আটক করেছেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন চেকপোস্টে জাল নথির কারণে আটক হয়েছেন ৬ হাজার ১০০ জন।


ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসেই নিয়োগ দুর্নীতির কারণে ওদেসার আঞ্চলিক নিয়োগ বোর্ডের প্রধান ইভগেনি বরিসভকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বরিসভ এসব দুর্নীতির মাধ্যমে অন্তত ৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি জনপ্রতি ২ থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত অর্থ নিয়ে তাদের নিয়োগ পাওয়ার হাত থেকে রেহাই দিতেন। 


 এদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে নিয়োগে আঞ্চলিক নিয়োগ বোর্ডের প্রধানদের বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—যে বা যারা রণক্ষেত্রে লড়তে চান না, ঘুষ নিয়ে তাঁদের রণক্ষেত্রে পাঠানোর থেকে বিরত থাকার অভিযোগ রয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক নিয়োগকেন্দ্রগুলোর প্রধানদের বিরুদ্ধে।


এমন এক সময়ে এই অভিযোগ এবং চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটল, যখন ইউক্রেনের জন্য প্রচুর নতুন সেনার প্রয়োজন। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়টিকে জেলেনস্কি বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।


শুক্রবার এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এই সিস্টেম চালানোর জন্য এমন লোক দরকার, যারা আসলে জানেন যুদ্ধ কী এবং যুদ্ধের সময় নিজের স্বার্থ উদ্ধার ও ঘুষ গ্রহণ কেন বিশ্বাসঘাতকতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা এরই মধ্যে রণক্ষেত্রে রয়েছেন, তাঁদের তো দীর্ঘ সময় ট্রেঞ্চে রাখা যাবে না। কারণ, তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কেউ তাঁদের কোনো অঙ্গ হারিয়েছেন। তার পরও তাঁরা নিজেদের সম্মান সমুন্নত রেখেছেন, স্বার্থবাদের কাছে মাথা নত করেননি। এমন লোকদের দিয়েই এই নিয়োগব্যবস্থা পরিচালনা করতে হবে।’


শেয়ার করুন