২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:৫৬:২৬ অপরাহ্ন
রাজশাহী রেলওয়ে: হাসপাতালের ৬ কোটি টাকা লোপাটে তিনজন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৮-২০২৩
রাজশাহী রেলওয়ে: হাসপাতালের ৬ কোটি টাকা লোপাটে তিনজন

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে হাসপাতালের প্রায় ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের তৎকালীন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও), প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিওএস) এবং ঠিকাদার পারস্পরিক যোগসাজশে এই অর্থ লোপাট করেন বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।


এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি টাকার ওষুধপত্র কেনার কোনো ভাউচারই পাওয়া যায়নি। অন্য ৫ কোটি টাকার বিভিন্ন সামগ্রী কেনার জন্য ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হলেও বাস্তবে মালামাল পাওয়া যায়নি।


বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের সাম্প্রতিক এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৎকালীন সিএমও, সিওএস ও ঠিকাদার মিলে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি রেলের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও উঠে এসেছে। এ জন্য তৎকালীন সিএমও ডা. এস এম ইমতিয়াজ অবসর গ্রহণ করলেও তাঁর পেনশনসহ অন্যান্য পাওনা আটকে রাখা হয়েছে। ইমতিয়াজের বাড়ি চট্টগ্রামে।


নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অর্থবছরে পশ্চিম রেলের হাসপাতালের জন্য পথ্য খাতে ১ কোটি ৩৩ হাজার ৩২ টাকা খরচ করা হয়েছে। ওই বছর হাসপাতালটিতে ২১৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। ছয়টি বিলের বিপরীতে এদের জন্য ৭৩ হাজার ১৪৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ৯৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৬ টাকার কোনো বিল-ভাউচার পাওয়া যায়নি। এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।


অভিযোগ অস্বীকার করে তৎকালীন সিএমও দাবি করেছেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থ বরাদ্দ করায় বিধি মোতাবেক তা ব্যয় করা হয়েছে। তবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ জবাব আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয়।


কারণ, অর্থ খরচের কোনো বিল-ভাউচারই পাওয়া যায়নি।


প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সিএমও দপ্তরের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওই অর্থবছরে সিওএস দপ্তরের মাধ্যমে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৮১ টাকার মালামাল কেনা হয়েছে। ঠিকাদারকে বিলও পরিশোধ দেখানো হয়েছে। কিন্তু ক্রয়কৃত এসব স্যানিটারি সামগ্রী স্টকভুক্ত করা হয়নি। ক্রয়সংক্রান্ত কোনো চুক্তিপত্র, আর নোট এবং চালানও নেই। এতে প্রতীয়মান হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এসব দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে।


প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চলতি বছরের জুনে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন জাতীয় সংসদে জমা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে ৩৬টি অনুচ্ছেদে রেলওয়ের ৪১৯ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার ৪৬১ টাকার অডিট আপত্তি উঠে এসেছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমাঞ্চলের টাকার পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, দুর্নীতি করলেই পার পাওয়া যায় না। বিষয়টি রেলের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ধরা পড়েছে, নিরীক্ষার সময়ও পাওয়া গেছে। এ জন্য তৎকালীন সিএমও ডা. ইমতিয়াজ অবসর গ্রহণ করলেও তাঁর পেনশনসহ যাবতীয় পাওনা আটকে আছে। তাঁকে সবকিছুর হিসাব দিতেই হবে।’


শেয়ার করুন