২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০২:০৯:০৬ অপরাহ্ন
আলোচনায় পেনশনের লাভ-ক্ষতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৩
আলোচনায় পেনশনের লাভ-ক্ষতি

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হওয়ার দুই দিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্কিমে প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন, চাঁদা দেওয়া শুরু করেছেন ৪ হাজারের বেশি গ্রাহক। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া এই ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহের কমতি নেই মানুষের। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সবখানে যে প্রশ্নটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, তা হলো কিসে লাভ বেশি—পেনশন, না প্রচলিত ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ?


ব্যাংকের আমানতে মেয়াদি সঞ্চয় এবং সঞ্চয়পত্রে এখন ৯ থেকে ১০ শতাংশ মুনাফা মিলছে, সেখানে পেনশনে কেমন লাভ পাওয়া যাবে—এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মুখে মুখে।


বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে পেনশনব্যবস্থা লাভজনক। কারণ এটি নেওয়াই হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে। তবে এটিকে জনপ্রিয় করতে প্রচলিত অন্য কোনো স্কিম বা পদ্ধতির চেয়ে সুযোগ-সুবিধা বেশি দিতে হবে। পাশাপাশি নতুন কী সুবিধা যুক্ত করা যায়, তা-ও দেখতে হবে। যাতে মানুষ আরও বেশি আকৃষ্ট হয়। 


ব্যাংক বা পেনশনে বিনিয়োগে কেমন মুনাফা মিলবে দেশের তফসিলি ব্যাংকেই মাসিক কিস্তিতে এবং মেয়াদি সঞ্চয়ের সুযোগ রয়েছে। নামকরা প্রথম সারির একটি তফসিলি ব্যাংকে কোনো গ্রাহক ৫০ বছর বয়সে মাসিক ২ হাজার টাকা হারে ১০ বছরের জন্য সঞ্চয় করলে, তাঁর মোট জমা হবে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে মেয়াদ শেষে বা ৬০ বছর বয়সে সব মিলিয়ে গ্রাহক এককালীন পাবেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৪ টাকা। ব্যাংকভেদে অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকার মতো কমবেশি হতে পারে। এ টাকা গ্রাহক কোথাও বিনিয়োগ করতে পারেন। বাড়তি কোনো বিনিয়োগ ছাড়া প্রাপ্য টাকা গ্রাহক চাইলে পরের ১০ বছরের জন্য মেয়াদি সঞ্চয় হিসাবে জমা রাখতেও পারেন। এতে মোট ২০ বছর বা গ্রাহকের ৭০ বছর বয়সে প্রায় মূল টাকার দ্বিগুণ বা সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো পেতে পারেন।


একই ব্যক্তি একই পরিমাণ বা ২ হাজার টাকা চাঁদা জাতীয় পেনশন স্কিমে টানা ১০ বছর জমা করলে বা মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা হবে। এর বিপরীতে ১০ বছর পর বা ৬০ বছর বয়স থেকে গ্রাহক মাসে ৩ হাজার ৬০ টাকা হারে পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে এককালীন অর্থ পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই ৩ হাজার ৬০ টাকা হারে অন্তত ব্যাংকের সমান অর্থ পেতে হলে গ্রাহককে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৯ বছর বা ৬৯ বছর বয়স পর্যন্ত।


অর্থাৎ, একই পরিমাণ বিনিয়োগে ব্যাংকে ১০ বছরে যে লাভ পাওয়া যাবে, সর্বজনীন পেনশনে স্কিম তা পাওয়া যাবে ১৯ বছরে। তবে পেনশন গ্রহীতা বা তার নমিনি পেনশন পাবেন কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে। আর গ্রাহক জীবিত থাকলে তো পাবেন আজীবন, এমনকি শত বছর বয়স হলেও। তাই দীর্ঘমেয়াদি পেনশন লাভজনক।


অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংকের চেয়ে পেনশনে লোকসান মনে হলেও, হিসাবটি এত সরল নয়। পেনশন স্কিম মূলত কর্মজীবন-পরবর্তী সুরক্ষার জন্য। যাতে তাঁর মাসিক খরচের কোনো সমস্যা না হয়। কেউ যদি ১০ বছর পর পুরো টাকাই এককালীন সঞ্চয়ে লাগান, তাহলে তাঁর দৈনন্দিক খরচ নির্বাহের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ওই টাকা যদি ব্যাংকে মাসিক মুনাফার ওপর ভিত্তি করে সঞ্চয় করেন, তাহলেও তাঁর সংসার চালানোর খরচ এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে।


অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, টাকা যদি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হয়, তাহলে সম্পদ বাড়বে। কিন্তু পেনশনের মূল উদ্দেশ্য সম্পদ বাড়ানো না। অবসরের পরে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মাসের খরচ নির্বাহের জন্যই পেনশন। মেয়াদি আমানত রাখলে তো মাসিক খরচের টাকা নিতে পারবে না। এ টাকা ব্যাংকে আমানত হিসাবে রাখলে অনেক কম মুনাফা পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রতি মাসেই অবসরে যাওয়া মানুষের খরচ জোগাতেই পেনশনব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। কর্মক্ষমতাহীন মানুষের শেষজীবনের সুরক্ষাই পেনশনের মূল কথা, যা পাওয়া যাবে আজীবন।


ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পেনশনে সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা খুবই জরুরি। তা ছাড়া অবসরজীবনের শুরুতে মাসিক পেনশনের সঙ্গে গ্রাহককে নির্দিষ্ট পরিমাণ এককালীন দেওয়া যায় কি না তাও ভেবে দেখা উচিত।


অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, সরকার নিশ্চয় সব চিন্তাভাবনা করেই শেষ বয়সে মানুষের সুরক্ষার বিষয় সামনে রেখেই পেনশনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে কীভাবে এ তহবিলের টাকা উত্তম বিনিয়োগ করা যায় তা দেখা উচিত। পেনশনের নতুন নতুন কোনো সুযোগ রাখা। তবে সুরক্ষার হিসাবে এটা অবশ্যই লাভজনক।


শেয়ার করুন