২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০২:২৪:৫৫ অপরাহ্ন
লাখ ছুঁই ছুঁই ডেঙ্গু রোগী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৮-২০২৩
লাখ ছুঁই ছুঁই ডেঙ্গু রোগী

কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল। ক্ষুদ্র এডিস মশাবাহিত এ রোগটি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও আগস্টে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২ হাজার ১৩৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের নিয়ে এ বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৯৯৪ জনে। এর আগে ২০১৯ সালে সর্বাধিক ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আজ আগের রেকর্ড ভাঙবে।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মশাবাহিত এ রোগে মৃতের মোট সংখ্যা রেকর্ড বেড়ে দাঁড়াল ৪৭৬ জনে। নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ৭৮৫ জন এবং অন্যান্য জেলায় ১ হাজার ৩৪৯ জন। আর মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে ছয়জন ঢাকার, বাকিরা বাইরের।


বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ হাজার ৫৮২ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৫৩২ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪০৫০ জন।


এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুনে যেখানে পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। আর আগস্টের ১৯ দিনেই ৪৮ হাজার ১৬২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।


মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩ ও মে-তে এক হাজার ৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এর আগে জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩ এবং এপ্রিল ও মে-তে ২ জন করে প্রাণ হারান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। সারা দেশে গত জুনে যেখানে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল, পরের মাসে সেই সংখ্যা হয় ২০৪। আর আগস্টের ১৯ দিনে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২৫ জনের।


এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।


এমন বাস্তবতা সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে কিছুটা নিম্নমুখী হলেও এই ‘প্যান্ডামিক’ কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ৩৩তম সপ্তাহে এসে ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী দেখা গেছে। রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে সর্বাধিক ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রোববার দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন।


তিনি বলেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত শুরু হওয়ার পর ২৯-৩০তম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে। এরপর থেকে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তবে ৩১-৩২তম সপ্তাহে ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দেখা গেছে।


আমরা দেখেছি, যে কোনো ‘প্যান্ডামিক’ই একটি নির্দিষ্ট সময় শুরু হয়, একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে শেষ হয়। তবে এ বছর ডেঙ্গুর গন্তব্য কোথায় গিয়ে থামবে, সেটি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।


ডা. শাহাদাত বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য ২ হাজার ৬০০র বেশি ডেডিকেটেড শয্যা রয়েছে। কিন্তু সবমিলিয়ে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ১৯৭৪ জনের মতো। তার মানে হলো এখনো বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ছয় শতাধিক ডেঙ্গু শয্যা ফাঁকা আছে।


তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ঢাকা মেডিকেলে, ৩১৫ জন। এরপরই মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থান।


ডা. শাহাদাত বলেন, গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা দেখছি, নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গুতে পুরুষদের আক্রান্তের হার ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ হলেও নারীদের আক্রান্তের হার ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, আক্রান্তের দিক থেকে পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান যদি আমরা দেখি, ৪৬ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ মারা গিয়েছেন ৩৩ জন। তার মানে ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীদের প্রতি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।


শেয়ার করুন