২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৩:১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
গুদামে জায়গা নেই তবু চাল ও গম কেনার চেষ্টা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২৩
গুদামে জায়গা নেই তবু চাল ও গম কেনার চেষ্টা

দেশের সরকারি খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা ২১ লাখ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ১৬ আগস্টের তথ্য অনুসারে, সরকারি গুদামে ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৫ টন ধান, চাল ও গম মজুত আছে। সরকারি গুদামগুলো খাদ্যশস্যে ঠাসা থাকলেও আরও ১০ থেকে ১২ লাখ টন চাল ও গম কিনতে চায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য সরকারি গুদামের জায়গা খালি করতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দুই মাসের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) চাল একবারে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের তিন মাসের খাদ্যশস্য একত্রে বরাদ্দ দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


বিশ্লেষকেরা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও এ ধরনের কেনাকাটা নিরর্থক। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন ধান-চালে গুদাম বোঝাই, তখন কিসের জন্য খাদ্যশস্য কিনতে হবে? খাদ্যশস্য রাখার জায়গাও তো থাকতে হবে। গুদাম খালি করে খাদ্যশস্য কেনার বিষয়টি টোটালি মিনিংলেস (সম্পূর্ণ অর্থহীন)।’


তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলছেন, বিশ্বে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমার কারণে দেশে যাতে সংকট না হয় সে জন্যই এমন উদ্যোগ। সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। নানা কারণে বিশ্বে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমেছে। ভারত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ গম কেনার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে চাল ও গমের দাম আরও বাড়তে পারে। দেশে যাতে খাদ্যসংকট না হয় সে কারণে আমরা পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও অতিরিক্ত চাল-গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জায়গা না থাকায় সরকারি গুদাম খালি করতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দুই মাসের চাল একবারেই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের তিন মাসের খাদ্যশস্য একত্রে বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে। এতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।’


খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ৭ মে শুরু হওয়া সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬২ টন। ওই দিন সরকারি গুদামে মজুত দাঁড়ায় ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৫ টন। ফলে গুদামে জায়গা নেই বললেই চলে।


জানা যায়, আগামী জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগেই সীমিত আকারের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হতে পারে। তাই খাদ্যশস্যের মজুত বাড়ানোর তাগিদ আছে সরকারের। চলতি অর্থবছরে ৬ লাখ টন গম ও ৫ লাখ টন চাল আমদানির বাজেট বরাদ্দ আছে। দুটি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ১ লাখ টন গম আনার প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে আরও দরপত্র আহ্বান করা হবে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আরও ২ লাখ টন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গুদামে জায়গা না থাকায় এবার গুদাম খালি করার কৌশল নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।


মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গুদামে কিছু জায়গা খালি করার লক্ষ্যে সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে সব জেলা প্রশাসককে। চিঠিতে বলা হয়েছে, খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বরাদ্দকৃত চাল একবারেই উত্তোলন করতে পারবেন ডিলাররা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানানো হয়।


সূত্রমতে, এর আগে তিন মাসের রেশনের চাল-আটা একবারে বরাদ্দ দিতে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, খাদ্যশস্যের মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের খাদ্যশস্য কেনা ও সংরক্ষণ করে থাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে গুদামগুলোতে মজুত ধারণক্ষমতার কাছাকাছি। চলমান মৌসুমে চাল উৎপাদনকারী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে উৎপাদন কম হয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাশিয়া-ইউক্রেন শস্য চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বিশ্ববাজারে গমের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশে নিরাপদ খাদ্য মজুত গড়তে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের রেশনের খাদ্যশস্য আগামী অক্টোবর পর্যন্ত দিলে তা গ্রহণ করতে সক্ষম কি না তা জানা প্রয়োজন। এরপর শুধু দুদক ও ফায়ার সার্ভিস থেকে ইতিবাচক জবাব পাওয়া গেছে।


সাবেক খাদ্যসচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলা ও বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’


ড. এম আসাদুজ্জামান মনে করেন, গুদাম খালি করে খাদ্যশস্য কেনার দুটো কারণ থাকতে পারে। একটি হতে পারে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসব খাদ্যশস্য ছেড়ে জনগণের সমর্থন আদায়। অপরটি হতে পারে সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় আপৎকালীন মজুত বাড়ানো। তিনি বলেন, ‘তাদের আসল উদ্দেশ্য আমরা বলতে পারব না। গুদাম খালি করার চেয়ে নতুন গুদাম নির্মাণ করা জরুরি। যাদের তিন মাসের রেশন একবারে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাদের ওই রেশন তিন মাস রাখার মতো জায়গা আছে কি না, তাও ভাবতে হবে।’


শেয়ার করুন