হাসান মজুমদার ও সোহেল রানা। তাঁরা ছিলেন যথাক্রমে রাজধানীর একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক ও বাবুর্চি। ঘুষ না দেওয়ায় ডিবি পুলিশের একটি দল তাঁদের ফাঁসিয়ে দিয়েছিল জাল টাকার সাজানো মামলায়। প্রায় সাত বছর পর আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন তাঁরা।
তাঁদের ফাঁসানো ডিবি পুলিশের ৯ জন সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দিলেও সাত মাসে নির্দেশটি পুলিশ সদর দপ্তরে পৌঁছায়নি।
ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের পিপি হুমায়ুন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদেশে আমাদের পাঠাতে বলা হয়নি। তাই আমরা পাঠাইনি। এটা ভিকটিমকে দিয়ে আসতে হবে।’ তবে হাসান মজুমদারের আইনজীবী আব্দুস সালাম খান বলেন, এটা আদালত থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাতে হবে।
ডিবির ওই ৯ সদস্য হলেন মামলাটির বাদী পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জল হোসেন, ৫ জন এএসআই মো. জিয়াউর রহমান, মো. সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মো. মোমিনুল হক, নাজমুল হক প্রধান এবং ২ কনস্টেবল নয়ন কুমার ও গোলাম সারোয়ার।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরানা পল্টনের ‘বন্ধু হোটেলে’ যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিবি পূর্ব (বর্তমানে ডিবি মতিঝিল) তৎকালীন পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী। তাঁরা অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় হোটেলটির ব্যবস্থাপক হাসান ও বাবুর্চি সোহেল রানাকে তুলে নিয়ে যায়।
পরদিন তাঁদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ২৫ লাখ টাকার জাল টাকার মামলা করে ডিবি। ঘটনাস্থল দেখানো হয় ফকিরাপুল এবং সময় উল্লেখ করা হয় ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টা। দুই দিনের রিমান্ড শেষে ১১ নভেম্বর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। উপপরিদর্শক (এসআই) দেওয়ান উজ্জল হোসেন তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ১২ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান হাসান ও সোহেল। তাঁরা কারাগারে থাকা অবস্থায় হাসানের যমজ ভাই হোসেন মজুমদার ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর আইজিপির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে পরে তিনি তা প্রত্যাহার করেন। হোসেন বলেন, ডিবি মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে তিনি অভিযোগ তুলে নেন। কিন্তু ডিবি মামলা তুলে নেয়নি।
মুক্তির পর হাসান ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে ডিবির ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দেন। ডিএমপির গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের তৎকালীন অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রশাসন) মোহাম্মদ সাদেহ মিয়া তদন্ত করে সাজানো মামলার সত্যতা পান।
২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দেন। ২০২২ সালে ওই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পুলিশ। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি মামলার রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত হাসান মজুমদার ও সোহেল রানাকে বেকসুর খালাস দেন। রায়ে আদালত ওই দুজনকে গ্রেপ্তারকারী ডিবির পরিদর্শক তপন কুমার ঢালীসহ ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) আদেশ দেন।