২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৩২:৩২ পূর্বাহ্ন
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: যানবাহনের গতি বাড়বে রাজধানীর এক দিকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৯-২০২৩
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: যানবাহনের গতি বাড়বে রাজধানীর এক দিকে

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন আজ শনিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ কাওলায় উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। পরে শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন। এই অংশে ১৩টি সংযোগ সড়ক দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে পরের দিন।


এই এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-সংলগ্ন কাওলা থেকে ফার্মগেটে আসতে ১০ মিনিটের মতো লাগবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সূত্রমতে, এই অংশের মূল পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং র‍্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার।


র‍্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি-হুইলার, মোটরবাইক, বাইসাইকেল ও পথচারী চলাচল করতে পারবে না। কোথাও থেমে ছবি তোলা যাবে না।


প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে অংশটুকু উদ্বোধন হবে, সেখানে সব ধরনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উদ্বোধনের পরদিন ভোর ৬টা থেকে যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে বাকি অংশের কাজও চলছে। সব মিলিয়ে ৬৫ শতাংশের ওপরে কাজ হয়েছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে সুবিধা হলেও ঢাকা শহরের সংযোগগুলোতে সমস্যা দেখা দেবে।


এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ঢাকা শহরের মধ্য দিয়ে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে। সেসব সমস্যা কাটিয়ে তুলতে কাজ হচ্ছে।


র‍্যাম্পে ওঠানামা যেখানে যেখানে

কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে ওঠানামার জন্য মোট ১৫টি র‍্যাম্প থাকবে। এগুলোর মধ্যে বিমানবন্দরে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি এবং ফার্মগেটে একটি। আপাতত ১৩টি র‍্যাম্প উন্মুক্ত করা হবে। উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী যানবাহন উঠবে শাহজালাল বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা, প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব থেকে আর নামবে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে। দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী যানবাহন উঠবে বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর ও দক্ষিণ লেন এবং বনানী রেলস্টেশনের সামনে থেকে। আর নামবে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর সামনে বিমানবন্দর সড়কে, কুড়িল বিশ্বরোডে এবং বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে। তবে মহাখালীতে একটি ওঠার র‍্যাম্প এবং বনানীতে সড়ক ভবনের পাশের ওঠার র‍্যাম্প আপাতত বন্ধ থাকছে।


চার ক্যাটাগরিতে টোল

চার ক্যাটাগরিতে (শ্রেণি) টোল আদায় হবে। ক্যাটাগরি-১ এ কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাক (৩ টনের কম) ৮০ টাকা; ক্যাটাগরি-২ এ মাঝারি ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা, ক্যাটাগরি-৩-এ ট্রাক (৬ চাকার বেশি) ৪০০ টাকা, ক্যাটাগরি-৪-এ সব ধরনের বাস (১৬ সিট বা তার বেশি) ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।


প্রকল্পের অগ্রগতি

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রথম চুক্তি সই করা হয়। এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে সংশোধিত চুক্তি সই হয়। প্রকল্পটির যৌথ বাস্তবায়নকারী থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (৫১ শতাংশ), চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শোনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক গ্র্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪ শতাংশ) ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড (১৫ শতাংশ)। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। তবে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থসংস্থানের জটিলতায় চারবার সময় বাড়ানোর ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকায়। পুরো কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রকল্পের মূল পথের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার।


বিশেষজ্ঞদের মত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্দেশ্য ছিল শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গাড়িগুলো যানজট ছাড়া চলাচল করতে পারবে। আংশিক চালুর ফলে মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া শহরের মধ্যে যেসব জায়গায় র‍্যাম্প থাকবে, সেখানে ট্রাফিক পদ্ধতি ঠিক না করা গেলে যানজট বাড়বে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, এখনকার বাস্তবতায় এই এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান, টেকসই ও পিক আওয়ারে সমাধান দিতে পারবে না। এর বেশি সুবিধা পাবে ব্যক্তিগত যান। ২০১৩ সালে যখন এটা হওয়ার কথা ছিল, তখনকার প্রেক্ষাপট এক রকম ছিল। আর এখন সেটা ভিন্ন রকম। তিনি বলেন, ফার্মগেট অংশে যে যানবাহনগুলো নামবে, তারা একটা সুবিধা পাবে। কারণ, এরপর চওড়া মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ আছে। তবে বনানী ও মহাখালীতে যেখানে নামবে, সেখানে আগে থেকেই যানজট আছে।


শেয়ার করুন