১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৩:০১:১৫ অপরাহ্ন
মস্কোতে হত্যার শিকার কে এই রুশ সামরিক কর্মকর্তা ইগর কিরিলভ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১২-২০২৪
মস্কোতে হত্যার শিকার কে এই রুশ সামরিক কর্মকর্তা ইগর কিরিলভ

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে গত মঙ্গলবার ইলেকট্রিক স্কুটারে লুকানো একটি বোমা বিস্ফোরণ নিহত হন রাশিয়ার পারমাণবিক সুরক্ষা ফোর্সের সিনিয়র জেনারেল ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইগর কিরিলভ। এছাড়া তিনি রাশিয়ার রেডিওলজিক্যাল, কেমিক্যাল এন্ড বায়োলজিক্যাল প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ছিলেন।


কিরিলভ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। এর পেছনে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সিকিউরিটি সার্ভিস অব ইউক্রেন–এসইউবির হাত আছে বলে জানিয়েছেন কিয়েভের এক কর্মকর্তা। 


তিনি বলেছেন, প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। এই অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার জন্য কিরিলভ একজন ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে’ পরিণত হয়েছিলেন।


আকস্মিক এই হামলার পর জেনারেল কিরিলভকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রকমের কৌতহল। কিরিলভ কে ছিলেন, তার কাজ কী ছিল এবং কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে? এসব নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। চলুন জেনে নেই তার সম্পর্কে।


যেভাবে বিস্ফোরণ


কিরিলভ ছিলেন রাশিয়ার ‘নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রোটেকশন ট্রুপস’ বাহিনীর প্রধান। আজ মস্কোয় এক সহযোগীকে নিয়ে একটি আবাসিক ভবনে প্রবেশ করছিলেন তিনি। তখন সেখানে একটি স্কুটারে লুকিয়ে রাখা বোমায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানিয়েছে রুশ তদন্তকারী দল।


ওই তদন্তকারী দলের নাম ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি। সাধারণত বড় অপরাধগুলোর তদন্ত করে থাকে তারা। কিরিলভ ও তাঁর সহযোগীকে হত্যার জন্য কী দায়ী, তা এখনো স্পষ্ট করেনি ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি। শুধু এটুকু জানিয়েছে, এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।


ইউক্রেনের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিরিলভ ও তার সহযোগীকে হত্যা করা ছিল এসবিইউয়ের একটি ‘বিশেষ অভিযান’।


রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম তাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের হামলায় যে পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে, ঠিক একই পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল ২০১০ সালে মস্কোর মেট্রোতে আত্মঘাতী বোমা হামলায়। সেবার অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৮০ জন।


এই ভবনে প্রবেশ করছিলেন কিরিলভ। বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে যায় ভবনটির প্রবেশপথ। সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায় কয়েকটি মৃতদেহ


কিরিলভই প্রথম নন


তাসের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন কিরিলভ। এ আগে তিনি জার্মানিতে ‘সোভিয়েত ওয়েস্টার্ন গ্রুপ অব ফোর্সেসের’ প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে পূর্ব জার্মানি ও মস্কোয় মোতায়েন করা ছিল এই বাহিনীটি।


২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে হত্যার শিকার রাশিয়ার সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা হলেন কিরিলভ। এর আগে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে হত্যাকাণ্ডের শিকার সবচেয়ে বড় পদধারী রুশ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন রুশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ভ্যালেরি ত্রাঙ্কোভস্কি। তিনি রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর বহরের ৪১তম ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন।


গত নভেম্বরে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপে এক গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ভ্যালরি ত্রাঙ্কোভস্কি। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ইউক্রেনের একজন সরকারি কর্মকর্তা তখন জানিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন ত্রাঙ্কোভস্কিকে হত্যার পেছনেও এসবিইউয়ের হাত ছিল। এ ছাড়া সপ্তাহখানেক আগেই মস্কোয় রাশিয়ার একজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের বিষয়ে সহায়তা করতেন।


দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞা


ইউক্রেনের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিরিলভ ও তার সহযোগীকে হত্যা করা ছিল এসবিইউয়ের একটি ‘বিশেষ অভিযান’। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ওপর নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ায় কিরিলভ একজন বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন।’


হত্যার আগে গতকাল সোমবার কিরিলভের অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এনেছিল এসবিইউ। আর ইউক্রেন বাহিনীর ওপর বিষাক্ত ক্লোরোপিকরিন গ্যাস ব্যবহারের অভিযোগে গত মে মাসে কিরিলভের বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এই গ্যাসটি ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়েছিল।


কিরিলভের একটি দাবি ছিল, ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে জৈব অস্ত্রের গবেষণাগার স্থাপন করছে যুক্তরাষ্ট্র।


এ ছাড়া গত অক্টোবরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে ভূমিকার জন্য কিরিলভের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাজ্য। দেশটির ভাষ্যমতে, ‘ক্রেমলিনের অপতথ্য ছড়ানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্র’ ছিলেন কিরিলভ। তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা ও নিউজিল্যান্ডও।


কিরিলভের মৃত্যুর পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মস্কোর কর্মকর্তারা। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, রাশিয়ার জন্য নির্ভীকভাবে কাজ করে গেছেন কিরিলভ। তিনি কখনো আড়ালে লুকিয়ে থাকেননি। আর রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারমান আন্দ্রেই কারতাপোলভ তাকে একজন ‘সম্মানিত রুশ জেনারেল’ বলে অভিহিত করেছেন।


শেয়ার করুন