বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (ঢাকা উড়াল সড়ক) ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। অপেক্ষার পালা শেষে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
প্রথম দফায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। এই অংশের দূরত্ব ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দরের পাশে কাওলা থেকে ফার্মগেট আসতে সময় লাগছে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট।
নতুন এই পথে চলাচলকারীরা মনে করছেন, ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত রুট এটি। ঢকিার এ উড়াল সড়ক চালু হওয়ায় একদিকে দ্রুত যাতায়াত করা যাবে, অন্যদিকে নিচের সড়কে গাড়ির চাপ কমবে। এতে দুর্বিষহ যানজটের স্বস্তি মিলবে। বাঁচবে ঢাকাবাসীর অনেক কর্মঘণ্টা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নেয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটি নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়া এবং নকশা় জটিলতায় এর নির্মাণ কাজে কেটে গেছে অনেক সময়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলে টোল দিতে হবে। এজন্য যানবাহনকে চার শ্রেণিতে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে টোল। এতে সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ধরনের ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাকের (৬ চাকার বেশি) ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ টাকার মধ্যে টোল এবং ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা আছে।
তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীরা চলাচল করতে পারবে না। আর মোটরসাইকেল এখনই চলতে দেয়া হবে না। এছাড়া গাড়ি নিয়ে উড়ালসড়কে দাঁড়ানো ও ছবি তোলা নিষিদ্ধ।
এর আগে, গতকাল শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাওলা অংশে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে শুরু করে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ করার লক্ষ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিমি এবং র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক শূন্য কিমি। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিমি। এ অংশে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
উড়াল সড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল উড়াল সড়ক ১৯.৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প (সংযোগ সড়ক) রয়েছে। র্যাম্পসহ উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।