২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০২:৫৯:৩০ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে জাল সনদে চাকরি করা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৩
রাজশাহীতে জাল সনদে চাকরি করা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ

 রাজশাহীর বাগমারার পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুর রউফ মণ্ডলের বিরুদ্ধে ১৮ বছর ধরে জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।


জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদের বেতন-ভাতা পাওয়ার আবেদন করার পর যাচাই করতে গেলে বিষয়টি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরে আসে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক নির্দেশ দিয়েছেন।


এর আগেও ২০১৯ সালে আবদুর রউফের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।


কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের জুলাইয়ে আবদুর রউফ মণ্ডল ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন-ভাতা পাওয়ার জন্য কারিগরি অধিদপ্তরে আবেদন করেন। নিয়ম অনুযায়ী একাডেমিক সনদসহ চাকরির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করেন। এরপর যাচাই-বাছাইয়ে কারিগরি বোর্ড থেকে পাওয়া তাঁর ছয় মাস মেয়াদি এনএসএস বেসিক কোর্সের সনদটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। কারিগরি অধিদপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।


কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ভোকেশনাল শাখার পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন আহাম্মদ এক চিঠিতে জানান, জালিয়াতির তথ্য পাওয়ার পর ফৌজদারি আইনে মামলা করার জন্য বাগমারা থানার ওসি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে চিঠিটি থানায় পৌঁছেছে বলে ওসি নিশ্চিত করেছেন।


বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, কারিগরি অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিবের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ও জালিয়াতির যাবতীয় কাগজপত্র পেয়েছেন। তাঁর (আবদুর রউফ মণ্ডলের) বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার জন্য বলা হয়েছে।


কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, আবদুর রউফ মণ্ডল সাচিবিক বিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে ২০০৫ সালে নিয়োগ পান। কারিগরি বোর্ডের ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামো অনুসারে তাঁর যোগ্যতা ছিল না। ওই নিয়োগের জন্য কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যিক, পরিসংখ্যান, গণিত, অর্থনীতি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা এসব বিষয়ের একটিতে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ সনদ থাকার কথা নিয়োগ বিধিতে বলা আছে। তবে নিয়োগের এসব শর্ত পূরণ করেননি আবদুর রউফ। এরপরও তিনি ওই পদে নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্ত হয়ে সুবিধা ভোগ করে আসছেন।


পরবর্তী সময়ে আবদুর রউফ মণ্ডলসহ কয়েকজন শিক্ষকের জাল সনদে চাকরি করার একটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করে কারিগরি অধিদপ্তর। তৎকালীন সহকারী পরিচালক জহুরুল ইসলাম অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। তখন আবদুর রউফ মণ্ডলের এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর পর থেকে তিনি আগের মতোই সরকারি সুবিধা ভোগ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।


কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ান বলেন, কারিগরি অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে ওই শিক্ষকের জাল সনদের বিষয়ে জানানো হয়েছে।


অভিযুক্ত পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুর রউফ মণ্ডল জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জাল সনদটি তিনি দাখিল করেননি। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।


তাহলে কীভাবে তাঁর নথিপত্রের সঙ্গে এই সনদ যুক্ত হলো, এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। একপর্যায়ে এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্য বলেন তিনি। সূত্র- প্রথম আলো

শেয়ার করুন