রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) দামকুড়া থানার এসআই আকবর আলীর বিরুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ীর সাথে যোগসাজসে হরিপুর ইউনিয়নের ব্যাড়পাড়া এলাকার এক কৃষকের বাড়িতে মাদক রেখে এক অটো চালককে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে ব্যাড়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যাড়পাড়ার মৃত মজিদের ছেলে আব্দুর রশিদ (৬০) ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী গনস্বাক্ষর দিয়ে আরএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে ব্যাড়পাড়া এলাকার চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী ইমান আলীর ছেলে ইশাহাক আলী ও আজাহারের ছেলে আনোয়ারকে সাথে নিয়ে এসআই আকবর ও আরেকজন পুলিশ সদস্যসহ আব্দুর রশিদের বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে তৌফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী কে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তার কথা মতো আমার বাড়ি থেকে তার বের হয়ে গেলে মাদক কারবারী ইশাহাক ও আনোয়ার কৌশলে তার বাড়িতে মাদক রেখে দেয়।
অপরদিকে আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে তার প্রতিবেশী অটোচালক মৃত মাইনুল হকের ছেলে হায়দার আলীর বাড়িতে এসআই আকবর ও এক পুলিশ সদস্যসহ গিয়ে হায়দারকে ঘুম থেকে তুলে হ্যান্ডকাফ দিয়ে টেনে হেঁচড়ে আব্দুর রশিদের বাড়ির দিকে নিয়ে যায় এবং হায়দারকে বলে- তোর রাখা মাদক আব্দুর রশিদের বাড়িতে কোথায় আছে বের করে দে। এসময় এলকার ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ বাধা প্রদান করে এবং জনতার তোপের মুখে পরে হায়দারকে ছেড়ে দেই এসআই আকবর।
বিষয়টি বুঝতে পেরে মাদক কারবারি ইশাহাককে এলাকাবাসী আটক করলে এসআই আকবর ইশাহাককে ছাড়িয়ে নেয়। ছাড়া পেয়ে আব্দুর রশিদের বাড়িতে রাখা তাদের মাদক নিয়ে ইশাহাক ও আনোয়ার দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় জরুরী সেবা ৯৯৯ ফোন করেও বিষয়টি জানায় হয়রানির শিকার হায়দার।
আরও জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী ইশাহাকের সাথে এসআই আকবর যোগসাজস করে কৃষক আব্দুর রশিদের বাড়িতে মাদক রেখে তাকে ও হায়দারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দুই ভুক্তভোগীর ও তার পরিবার।
অভিযোগ উঠেছে, এসআই আকবরের সাথে এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের যোগসাজস রয়েছে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় মাদক ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়। সেই সাথে সাধারণ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতো কাজের সাথে জড়িত এই এসআই আকবর বলে অভিযোগ এলকাবাসীর।
সাম্প্রতিক, ব্যাড়পাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ে একটি হত্যাকান্ড ঘটে। সেই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আকবর। হত্যা মামলার ১নং আসামীকে র্যাব গ্রেপ্তার করলেও অন্য ৪ আসামীকে এখন পর্যন্ত এসআই আকবর গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে চলা ফেরা করছে বলেও অভিযোগ করেন মামলার বাদি উজ্জল।
ভুক্তভোগী ব্যাড়পাড়া এলকার অটোচালক মৃত মাইনুল হকের ছেলে হায়দার আলী জানান, আমি বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে হঠাৎ এসআই আকবরসহ দুই জন আমাকে বাড়িতে গিয়ে ডেকে তুলে কোন কিছু বোঝার আগেই আমাকে হ্যান্ডকাফ দিয়ে টেনে হেঁচড়ে আব্দুর রশিদের বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এসময় আমি ও এলকাবাসী প্রতিবাদ করলে তোপের মুখে পড়ে আমাকে ছেড়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমি কোন মাদক কারবারের সাথে জড়িত না। অটো চালাই। আমার বাড়িতে এবং আমার কাছেও কোন মাদক পাইনি। তার পরে এভাবে হয়রানির করেছে। বর্তমানে আমি পরিবার নিয়ে আতংকে রয়েছি।
হায়দার বলেন, পরে আমি বিষয়টি বুঝতে পারি- পরিকল্পিতভাবে মাদক কারবারি ইশাহাক ও আনোয়ার আমাকে মাদক দিয়ে ফিটিং দিতে চেয়েছিলো। আর এজন্য আগের দিন ইশাহাক মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কন্ট্যাক্ট করে এসআই আকবরকে। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ ও এমন হয়রানির শিকার যেন না হতে হয় এ জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয় আরএমপি দামকুড়া থানার এসআই আকবরের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয় পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে আরএমপি কাশিয়াডাঙ্গা জোনের এডিসি ড. রুহুল আমিন বলেন, এলাকায় কেউ মাদক ব্যবসা করলে ছাড় দেয়া হবে না। কোন পুলিশ অফিসার মাদক কারবারিদের সাথে যোগসাজস ও সুবিধা নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাড়পাড়া এলাকার দুই মাদক কারবারি ইশাহাক ও আনোয়ার পুলিশের তালিকা ভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে ও এসআই আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।