২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:৪২:০১ পূর্বাহ্ন
জনগণের ওপর সব ছেড়ে দিচ্ছি: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২৩
জনগণের ওপর সব ছেড়ে দিচ্ছি: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে সরকারি দলে থাকবেন, না হলে বিরোধী দলে যাবেন। আগামী অক্টোবরে চলতি সংসদের শেষ অধিবেশন বসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অক্টোবর মাসে আরেকটা অধিবেশন বসবে। সেটাই হবে এই সংসদের শেষ অধিবেশন। পরে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দেয়, আবার এদিকে (সরকারি দল) আসব। না দিলে ওদিকে (বিরোধী দল) যাব। কোনো অসুবিধা নাই। জনগণের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিচ্ছি।’


গতকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে এ সময় তিনি বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আর মাথা নত করবে না।


বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল মানেইনি। এ রকম তো ঘটনা আছে। তার পরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক সবক শুনতে হচ্ছে। আজকে যখন আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করছি, তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা। এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’


সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আর্থসামাজিক উন্নয়নে যে কাজ করে যাচ্ছি, তার সুফল তো দেশের তৃণমূলের জনগণ পাচ্ছে। আমরা যে ওয়াদা দিই, সেটা আমি রাখি। আমরা রাখতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘পরপর তিনবার আসতে পেরেছি বলেই এই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে আমাদের নির্বাচন হবে। আজকে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বড় বাজেট দিয়েছি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কার্যকর করে যাচ্ছি। সেখানে কৃচ্ছ্রসাধন করে যাচ্ছি।’


বিএনপির সময়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। তবে সময়ে সময়ে কিছু কিছু লোডশেডিং করতে হয়। আর লোডশেডিং মাঝে মাঝে থাকাটা ভালো। কারণ কী অবস্থায় ছিল, ভুলে যায় তো। তাই মনে করায়ে দেওয়ার দরকার আছে মাঝে মাঝে। সেই জন্য আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলি, একটু লোডশেডিং দিলে মানুষের মনে আবার আসবে... আমরা এ জায়গায় ছিলাম, এই জায়গায় যাচ্ছি, এটা মনে করায় দেওয়া উচিত।’


মূল্যস্ফীতিতে কিছু মানুষ কষ্টে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসের কিন্তু অভাব নেই। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। উৎপাদনের জন্য যা যা দরকার, সেটা করছি। বাজারে গেলে কোনো জিনিসের অভাব নেই। মনে হয়, কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছে করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দিয়ে কেউ কেউ এ রকম খেলা খেলে। সরকার পদক্ষেপ নিলে কমে আসে।’ বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাজার মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে এ সময় জানান তিনি।


মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছি। ধীরে ধীরে সেটা বাড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো হচ্ছে না। অনেকেই বলছে, টাকা ছাপিয়ে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো একদম বন্ধ করে দিয়েছি। টাকা ছাপানো হবে না।’ এ ছাড়া আরও কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।


ডলারের সংকট দূর করার জন্য সরকারের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘ডলার বিনিময় হার যাতে নমনীয় থাকে, সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন ইচ্ছেমতো এলসি খোলা যায় না। যাচাই করে এলসি খোলা হয়। আগে যেমন ইচ্ছেমতো কোনোটা অতিমূল্য, কোনোটা অবমূল্যায়ন করা হতো। সেটার আর সুযোগ নেই। এতে হয়তো কিছু ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে যান। সেটা সঠিক বিপদ না, টাকা পাচারের সুযোগ কমে যায়। সেই জন্য কিছু চিৎকার কিছুদিন শুনেছি।’


ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মশা মারতে কামান দাগলে হবে না। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সবাইকে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। কোথাও পানি জমে আছে কি না, তা দেখতে হবে। শুধু সরকার করে দেবে? সিটি করপোরেশন করে দেবে? গালি দিতে হবে। গালি দিলে তো হবে না। তাদের কাজ তো তারা করে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। কে কী করে দিল না-দিল, ওই কথা বলে লাভ নেই। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে। সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’


জনগণের আস্থা অর্জনের আহ্বান

বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তৃণমূলের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং তা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা তৃণমূলের মানুষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা আপনার আমার সবারই দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে এবং মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে আপনারা এগিয়ে যাবেন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।


প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন রোববার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী রোববার নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের জন্য আয়োজিত এক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি ২২ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেবেন।


শেয়ার করুন